ঢাকা: বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুমোদিত হলে এর নতুন নামকরণ হবে- ‘গভর্নেন্স পারফর্মেন্স মনিটরিং সিস্টেম’ (জিপিএমএস)। এপিএ পুনর্গঠনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে এমন প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত এপিএ কাঠামো পুনর্গঠন কমিটি।
জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১২ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ-কে আহ্বায়ক করে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের আলোকে এপিএ কাঠামো পুনর্গঠন সংক্রান্ত’ একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে এপিএ কাঠামো পুনর্গঠনে সুপারিশ প্রণয়নে গত ১৮ মার্চ ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপকমিটিও গঠন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় উপকমিটির সুপারিশের আলোকে গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক সভায় খসড়া সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে এপিএ কাঠামো পুনর্গঠন কমিটি। কমিটির সভাপতি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কমিটির সদস্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, অর্থসচিব, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিবসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত নতুন পদ্ধতির আওতায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর ও সংস্থা তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করবে। আর এ পরিকল্পনা যাচাইয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-এর আওতায় ‘ন্যাশনাল গভর্নেন্স পারফর্মেন্স মনিটরিং সিস্টেম এক্সপার্ট পুল’ (এনজিইপি) এর সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ‘জিপিএমএস’ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নির্দেশিকার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি প্রণীত এ কর্মপরিকল্পনা অর্থবছর শুরুর আগেই উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র অনুমোদন নিতে হবে। পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে প্রতি অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তা বাস্তবায়ন করবে। প্রতি অর্থবছরের শেষে কর্ম সম্পাদনের অগ্রগতি বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
প্রস্তাবিত জিপিএমএস-এ তিনটি মূল সেকশন থাকছে। এর মধ্যে সেকশন-১-এ তিন বছরের পরিকল্পনা এবং সেকশন-২-এ পরবর্তী অর্থবছরের কর্ম পরিকল্পনা থাকবে। আর সেকশন-৩-এ থাকবে অর্থবছর শেষে কর্ম সম্পাদনের প্রতিবেদন।
সেকশন-৩-এর কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন মূল্যায়নে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মূল্যয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের এই কমিটিতে এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রস্তাবিত তিন বছর মেয়াদি অনুমোদিত মূল কর্মপরিকল্পনা যদি সংশোধন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়, তবে তা দ্বিতীয় বছরে করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে কর্মপরিকল্পনার সংশোধন বা পরিমার্জন শতকরা ২০ ভাগের বেশি হবে না।
অন্যান্যের মধ্যে এপিএ পুনর্গঠন সংক্রান্ত গঠিত কমিটির প্রস্তাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে ‘সুশাসন ও সেবা’, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ‘সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়ন’, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ‘কৃষি ও ভৌত অবকাঠামো, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি’, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে ‘যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি’ গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা যায়।