মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে একটি বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে এই শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
দুই নেতা আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে অবস্থিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট বেজ এলমেন্ডর্ফ-রিচার্ডসনে মিলিত হবেন। বৈঠকটি আলাস্কার স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে (১৯:৩০ জিএমটি) শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে, এই সময় পরিবর্তন হতে পারে।
রাশিয়ার পক্ষে পুতিনের সঙ্গে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ, অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা।
মার্কিন পক্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কারা থাকবেন, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
আলোচনার মূল বিষয়
এই বৈঠকে প্রধানত রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনার টেবিলে একটি চুক্তির কাঠামো এবং উভয় পক্ষের সম্ভাব্য আঞ্চলিক ছাড়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
রাশিয়া কী চায়?
মস্কো তাদের ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় যদি ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়। রাশিয়া আরও চায়, খেরসন ও জাপোরিঝিয়াতে তাদের অগ্রগতি ধরে রাখার বিনিময়ে ইউক্রেন সমগ্র দোনবাস থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে। এ ছাড়াও, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করুক, এমনটা চায় মস্কো।
ইউক্রেন ও ইউরোপ কী চায়?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইউক্রেন কোনো অঞ্চল ছেড়ে দেবে না। ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় নেতারা জোর দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের উপস্থিতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেন কোনো আঞ্চলিক চুক্তিতে সম্মত না হয়। তাদের চাওয়া, যেকোনো শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকবে এবং যুদ্ধবিরতি হলেও ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হবে।
ট্রাম্পের প্রত্যাশা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমদিকে বৈঠকটিকে পুতিনের সঙ্গে একটি ‘অনুভূতি-নির্ভর’ কথোপকথন হিসেবে দেখলেও, সম্প্রতি তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হন, তবে রাশিয়াকে ‘গুরুতর পরিণতির’ সম্মুখীন হতে হবে। ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে বলেননি এই পরিণতি কী হতে পারে, তবে তিনি এর আগে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই শীর্ষ সম্মেলন একটি শান্তি চুক্তির সূচনা করতে পারে। তবে, অন্য বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত রাশিয়ার একটি কৌশল, যা যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে এবং ইউক্রেনে সামরিকভাবে আরও অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দিতে পারে।
বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, এই শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হলো কিছু অগ্রগতির ঘোষণা আসতে পারে, কিন্তু যুদ্ধ চলতেই থাকবে।