ঢাকা: সিরাজগঞ্জে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনসহ ৫টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে একটি প্রকল্প ছাড়া বাকী চারটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে।
রোববার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় একনেক সভা।
সভায় ৫টি নতুন প্রকল্প ছাড়াও ইতোপূর্বে অনুমোদিত ৫টি প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই শুধু মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং অপর দুটি প্রকল্পে মোট ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ১৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
অনুমোদিত নতুন পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’ স্থাপন; প্রায় ১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর বিদ্যমান শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার ৩৩/১১ কেভি আউটডোর উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন প্রকল্প; প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’; ৭৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মচারিদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-সি)’ এবং প্রায় ৬৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২টি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
সংশোধিত ২ প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা
সভায় অনুমোদিত ৫ সংশোধিত প্রকল্পের মধ্যে ‘ঢাকা পরিবেশবান্ধব টেকসই পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৮২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ১৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় সামান্য কমিয়ে ৮ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
এদিকে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ সাড়ে ৭ বছর বেড়েছে। মূল প্রকল্পটি ছিল ৫ বছর মেয়াদি (জানুয়ায়ী ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত)। এ সময়সীমা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া সভায় ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ফরিদপুর) বার্ন ও প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৩৬০ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪৫৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত ২০২২ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি চলতি বছরের গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধিত প্রস্তাবে এ সময়সীমা ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশোধিত ৩ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ৬ বার ও ৪ বার
একনেক সভায় ব্যয় না বাড়িয়ে তিনটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘বিএমআর কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ এবার নিয়ে ৬ দফায় মোট ১২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মূল প্রকল্পটি ছিল ২ বছর মেয়াদি (জুলাই ২০১২- জুন ২০১৪ পর্যন্ত)। এর সর্বশেষ সময়সীমা এখন দাঁড়িয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
অপর দুটি প্রকল্পের মধ্যে উভয়ের মেয়াদ এ নিয়ে চার দফা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ‘চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ চলতি পঞ্জিকা বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে (মূল প্রকল্প প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল আড়াই বছর: জুলাই ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত।
অন্যদিকে ‘বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার ৩টি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে (মূল প্রকল্প প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২ বছর: জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত)।