রংপুর: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশন এখনো চলছে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দফায় দফায় মিটিং করে পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করলেও রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘুমাচ্ছেন, আর কিছু শিক্ষার্থী জেগে আছেন। এর মধ্যে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী জয় আহমেদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৪ ব্যাচের মাহিদ হোসেন গত রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন; কিন্তু সেই অবস্থাতেই স্যালাইন সঞ্চালন করে তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, রাত সাড়ে ১২টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অনশনস্থলে এসে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তবে তারা প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে দেন রোডম্যাপ ঘোষণা ছাড়া আন্দোলন স্থগিত করবেন না। এর আগে, দুপুর থেকে দাবি আদায়ে আমরণে বসেন শিক্ষার্থীরা। হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখেন, ‘জুলাইয়ে অর্জিত স্বাধীনতা, ছাত্র সংসদ পেলে পাবে পূর্ণতা’, ‘এক দফা এক দাবি, ছাত্র সংসদ কখন দিবি’, ‘সাঈদ যেদিন বুক পেতেছে, ভয় সে দিন দূর হয়েছে’, ‘ছাত্র সংসদ আমাদের অধিকার’ ইত্যাদি।

অসুস্থ হয়েও স্যালাইন সঞ্চালন করে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু শিক্ষার্থী। ছবি: সারাবাংলা
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রতি গতকাল সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন, সদস্য সচিব রাশেদ মণ্ডল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সুমন সরকার ও সেক্রেটারি আব্দুর রাকিব মুরাদসহ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের মতে, লেজুরভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এবং প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনে তুলে ধরার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচিত ছাত্র সংসদ। অথচ অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে চলেছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে বাঁধা কোথায়?
২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৬ বছর ধরে এ খাতে অর্ধকোটি টাকার বেশি ফি আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্র সংসদ বাবদ আদায় করা টাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছামাফিক ব্যয় করছে। তবে এ টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয় জানেন না উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে অনার্স পর্যায়ে ভর্তিতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ছাত্র সংসদ বাবদ ২০০ টাকা আর দ্বিতীয় দফায় মাস্টার্সে ভর্তির সময় আদায় করা হয় ১০০ টাকা। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজার ও মাস্টার্সে ১৬ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ১৬ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫৬ লাখ টাকা ফি আদায় করছে কর্তৃপক্ষ। জনতা ব্যাংকের লালবাগ শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে এ টাকা জমা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও নেই ছাত্র সংসদ প্রসঙ্গ। ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-২০০৮’ আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান রাখা হয়নি। যার কারণে নির্বাচন করতে হলে প্রথমে ছাত্র সংসদ আইনের খসড়া একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাশ করে তা অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। বিধানটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্ত হলে তারপরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন যাবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী জানান, এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবু সাঈদের এই ক্যাম্পাসে আমাদের প্রথম কাজ ছিল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। তা আমরা ১০৮তম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছি। আমরাও চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হোক। ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির আগেই কাজ শুরু করেছি। গঠনতন্ত্র ছাড়া ছাত্রসংসদের রোডম্যাপ দেওয়া রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। যেহেতু গেজেট অনুমোদন নেই, তাই সরাসরি রোডম্যাপ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ইউজিসি থেকে আমাকে নিশ্চিত করেছেন, নভেম্বরের মধ্যেই ব্রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণে কোনো কার্যকর ঘোষণা না আসায় তারা আমরণ অনশনে বসেছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।