গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় এই পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অনাহারেই মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৬৩, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু। ক্ষুধার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। পরিবারের জন্য খাদ্যের সন্ধানে মরিয়া মানুষদের প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী বর্তমানে গাজার বৃহত্তম শহর গাজা সিটিকে দখলের জন্য তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জন খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন।
শহরের সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় সাংবাদিক ইসলাম আল-কউমিসহ অন্তত তিনজন নিহত হন।
গাজার পূর্বাঞ্চলে টানা হামলায় ভারী কামান, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে আবাসিক এলাকাগুলোকে পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন শিশু।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় পাঁচ বছরের নিচের প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার শিশু এখন তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের প্রবেশে বাধা থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এদিকে, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে হামাস। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে গাজায় আটক অর্ধেক ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েলি কারাগারে আটক কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনিও মুক্তি পাবে। তবে ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এর আগেও বহুবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে; কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামে জানিয়েছে, গাজায় এক লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।