গাইবান্ধা: সব প্রস্তুতি শেষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তানদীর উপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ আজ বুধবার (২০ আগস্ট) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ, ৩৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থ এবং ৩১ স্প্যানবিশিষ্ট এই সেতু কেবল গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের যোগাযোগের ইতিহাসেই নতুন অধ্যায় রচনা করবে না, বরং উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনমানেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে।
সেতুটি উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তার সঙ্গে থাকবেন একান্ত সচিব আবুল হাসান, জনসংযোগ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন, মাননীয় উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব আয়মন হাসান রাহাত, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা- মাহফুজুল আলম ভূঁইয়া, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (এনএসসি) সাইফুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহমুদুল হাসান (এনডিসি), যুগ্ন-সচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান, উপসচিব শামীম বেপারী, যুগ্ন-সচিব শাহিনুর আলম, সিনিয়র সহকারী সচিব ফারজানা আলম।
বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে থাকবেন সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি)-এর মহাপরিচালক ড. সৌদ আয়ীদ আলশাম্মারী, স্বতন্ত্রবাদী প্রোটোকল, মি. মোহাম্মদ সুলায়মান আলগওয়াইফ্লাইসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। এছাড়া, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর প্রধানগণ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করবেন।
নির্মাণ ব্যয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৩২ কোটি টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি), বাকি অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে চন্নয়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পে শুধু মূল সেতুই নয়, রয়েছে আরও ১৯টি উন্নয়ন প্যাকেজ—যার মধ্যে রয়েছে ৬৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ১১টি ব্রিজ, ৩৭টি কালভার্ট এবং ৮০ কিলোমিটার অতিরিক্ত সড়ক উন্নয়ন। দুই প্রান্তে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নেওয়া হয়েছে নদীশাসনের বিশেষ ব্যবস্থা।
যোগাযোগে নতুন দিগন্ত
সেতুটি চালু হলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতা ঘুচবে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। কৃষিপণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় কমবে, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানেও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
সেতুটির মাধ্যমে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে স্বল্প সময় ও খরচে শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া নদীর উভয় তীরের সংযোগসহ উন্নত রোড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ফলে ওই অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে। এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
অন্যদিকে পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টিসহ একটি নতুন পরিবহন করিডোর গড়ে ওঠায় রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরসহ কুড়িগ্রাম জেলার যোগাযোগের দূরত্ব ৪০-৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হ্রাস পাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সেতু উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনমান উন্নয়নে হবে গেমচেঞ্জার।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০২০ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের কিছুটা দেরিতে হলেও অবশেষে সেই স্বপ্নের সেতু আজ উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার দুয়ার।