ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বলেছেন, আমাদের কাছে এখন উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা আগেরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ইসরায়েল যদি কোনো নতুন আগ্রাসন চালায়, তবে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হবে।
বুধবার (২০ আগস্ট) মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীর লজিস্টিক বিষয়ক মন্ত্রী ১২ দিনের যুদ্ধের মূল কারণ, বিভিন্ন দিক এবং এর প্রকাশ্য ও গোপন উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যুদ্ধের শুরু থেকেই জায়নবাদী শাসন আমেরিকা থেকে ব্যাপক রাজনৈতিক, গোয়েন্দা, অপারেশনাল এবং সামরিক সহায়তা পেয়েছিল। অবশেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই আক্রমণাত্মক কার্যক্রমে অংশ নেয়। আমরা পুরোপুরি সচেতন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কিছু পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক দেশ জায়নবাদী শাসনের প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল, যেখানে আমরা অবৈধ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে কেবল আমাদের নিজস্ব সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।‘
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমরা আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এই আলোচনার ষষ্ঠ পর্ব মাস্কাটে চলবে, ঠিক সেই সময়েই জায়নবাদী শাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ১৩ জুন ভোরে সামরিক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সমন্বয়ে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। আমাদের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানী, যারা পরিবারের সঙ্গে বিশ্রামে ছিলেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়।‘
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ভেবেছিল এই আকস্মিক হামলা ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারদের হত্যা সামরিক কাঠামো ও কমান্ডের শৃঙ্খলা ভেঙে দেবে। তাই তারা এই কাপুরুষোচিত ও বিশ্বাসঘাতক হামলার দ্রুত প্রতিশোধের প্রত্যাশা করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উভয় পক্ষের বিশেষ পরিস্থিতি এবং ভৌগোলিক দূরত্ব বিবেচনা করে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান শত্রুর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল ঢেউ থেকে নিজেদের রক্ষার পাশাপাশি এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের শাহাদাত সত্ত্বেও, দুটি ভাগে প্রতিশোধমূলক হামলা ডিজাইন ও কার্যকর করে। ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন সমন্বিতভাবে চালানো হয়েছিল।‘
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইরানের প্রতিশোধমূলক অভিযান ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত এবং সুনির্দিষ্ট হয়। যুদ্ধের শুরুতে আমাদের ছোড়া প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র জায়নবাদী শাসন ও তার সমর্থকদের প্রতিরক্ষা স্তর ভেদ করতে পেরেছিল। যুদ্ধের শেষ দিকে ক্রমশ বেড়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়। এই ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুতর ক্ষতি করে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই যুদ্ধে ইরান প্রথমবারের মতো কিছু ক্ষেপণাস্ত্র যেমন ফাত্তাহ, সেজ্জিল এবং খাইবর শেকান ব্যবহার করে, যা ধীরে ধীরে যুদ্ধের পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে আসে। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য প্রায় ১৫০টি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার সবগুলোতে আঘাত হানা হয়। কাপুরুষ জায়নবাদী শাসনের মতো সামরিক কমান্ডার, বিজ্ঞানী, নিরীহ নারী ও শিশু, বেসামরিক অবকাঠামো, শিল্প কেন্দ্র, আবাসিক বাড়ি, চিকিৎসা কেন্দ্র, ত্রাণ বাহিনী, কারাগার এবং জাতীয় গণমাধ্যমকে লক্ষ্য না করে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সুনির্দিষ্টভাবে দখলকৃত অঞ্চলের সামরিক কেন্দ্রগুলো—বিশেষ করে বিমান ঘাঁটি, গোয়েন্দা কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র যেমন উইজম্যান ইনস্টিটিউট, বি’য়ের শেভার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, মোসাদ সদর দফতর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়—যা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হামলায় মূল ভূমিকা পালন করেছিল, সেগুলোকে ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল।’
গত জুন মাসে টানা ১২ দিন ধরে পালটাপালটি হামলা চালায় ইসরায়েল ও ইরান। ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনা, সামরিক স্থাপনা ও বেসামরিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহত হন পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাসহ হাজারের বেশি মানুষ। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ সংঘাত বন্ধ করে।