Wednesday 20 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউজিসির অর্থছাড় বেড়াজালে ইবির ৫৯ পদের শিক্ষক নিয়োগ ‘স্থগিত’

ইবি করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২৫ ২১:৫৯ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৫ ২৩:৪০

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক। ছবি: সারাবাংলা

কুষ্টিয়া:  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষক সংকট নিরসনে ২১টি বিভাগে ৫৯টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থছাড় না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া ‘স্থগিত’ রয়েছে। এতে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে ওঠার আশা জাগলেও তা সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে সর্বশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয়টি বিভাগে ছয়টি পদে অর্থছাড় রয়েছে। সেই পদগুলো প্রশাসন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আগাতে পারবে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ১৫টি বিভাগেই তীব্র শিক্ষক সংকট রয়েছে। এসব বিভাগে গুটিকয়েক স্থায়ী শিক্ষক ও অন্য বিভাগ থেকে ধার করা শিক্ষক দিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলছে। বিভাগগুলোর সভাপতিদের অভিযোগ, বিভাগ থেকে বারবার চাহিদা দেওয়া হলেও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব ও অব্যবস্থাপনায় নিয়োগ হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, জীববিজ্ঞান, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ২১টি বিভাগে মোট ৫৯টি পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে প্রার্থীরা আবেদনও করেন। তবে এসব বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ইউজিসির অর্থছাড়ের পূর্বানুমতি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না।

প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিভাগগুলোর অর্থছাড় থাকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত জানুয়ারি ও মার্চে দুই দফায় এসব পদে অর্থছাড় বিষয়ে অনাপত্তি চেয়ে ইউজিসিতে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ইউজিসি সব পদের অর্থছাড় অনুমোদন না করে শিক্ষক স্বল্পতা বিবেচনায় মাত্র ছয়টি পদে অর্থছাড় দেয়। ফলে প্রার্থীদের আবেদন সম্পন্ন হলেও ছয় মাসে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ছয়টি পদে অর্থছাড়ের সিদ্ধান্তের পর গত ৩ আগস্ট নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে ছয়টি বিভাগে একটি করে প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপিত বিভাগগুলো হলো ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম, ফোকলোর স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট।

আগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যারা এসব বিভাগে আবেদন করেছিল তাদের পুনরায় আবেদনের প্রয়োজন নেই বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানায়, পূর্বের বিজ্ঞাপিত বিভাগগুলোতেও তীব্র শিক্ষক সংকট রয়েছে। কিছু বিভাগে দুই-চার জন শিক্ষক দিয়ে পাঁচ-ছয়টি শিক্ষাবর্ষের শ্রেণিকার্যক্রম চলছে। বিজ্ঞপ্তির পর সংকট নিরসনের আশা জাগলেও ইউজিসির অর্থছাড় না পাওয়ায় সংকট উত্তরণ নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এসব পদে আবেদনকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীদের ত্যাগে আজ দেশ রাহুমুক্ত, সেই শিক্ষার্থীরাই শিক্ষক সংকটে ভুগছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করা হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ইবির শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় শিক্ষকের হার অ্যাক্রিডিটেশনের শর্তের চেয়ে অনেক কম। বিভিন্ন বিভাগে দুই-তিন জন শিক্ষক অনেকগুলো কোর্স নিচ্ছেন। এটি ইউজিসির ক্লাস লোড পলিসির পরিপন্থি। ৩৬টি বিভাগের জন্য অ্যাক্রিডিশনের ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে ১০৮০ জন শিক্ষক প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৪০৬ জন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ এ বিষয়ে ইউজিসির পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি। এখন অনুমোদন নবায়নের জন্য চেষ্টা করছি। ছাড়পত্র পেলে নতুনভাবে সার্কুলার দেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিটি পদের জন্য ইউজিসির অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন না পাওয়ায় পূর্বের বিজ্ঞপ্তিগুলো কার্যকর হয়নি। আমরা ভেবেছিলাম অনুমোদন পাওয়া যাবে, কিন্তু হয়নি। তবে সর্বশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি আর্থিক ছাড় থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অনুমোদন পাব, সেজন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। তবে পরবর্তীতে ইউজিসি অর্থনৈতিক ছাড় দেয়নি। তাই সেগুলো আপাতত নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা এটি নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে আলোচনায় বসব। তবে নতুন ছয় পদের বিষয়ে অর্থনৈতিক ছাড় পেয়েছি।’

ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জামিনুর রহমান বলেন, ‘৬টি পদে অনুমতি চেয়েছিল সেগুলোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয় আমার জানা নেই।’

সারাবাংলা/এসএস

অর্থছাড় ইউজিসি ইবি বেড়াজাল শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর