এসডিজি বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে কাজ করছে সরকার
৫ জুলাই ২০১৮ ২০:২২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আটঘাঁট বেঁধে নেমেছে মন্ত্রণালয়গুলো। তবে অধিকাংশের বাস্তবায়ন হার এখনো কাঙ্খিত মানে পৌঁছায়নি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে (বিআইসিসি) এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন পর্যবেক্ষণ করে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বুধবার তিন দিনব্যাপী এ জাতীয় সম্মেলনটি শুরু হয়। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার মোট তিনটি ভেন্যুতে সকাল ৯টা থেকে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়।
এদিন প্রথম পর্বে বিআিইসিসির কার্নিভাল হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর, দেশি-বিদেশি উন্নয়ণ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়ে ১৭টি বিষয়ের ওপর নিজ নিজ দপ্তরের উন্নয়ন ফিরিস্তি, সমস্যা, সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতার চিত্র তুলে ধরেন।
একই সময়ে মিডিয়া বাজারের ভেন্যুতে নারী ও শিশু বিষক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ওপর পর্যালোচনা হয়।
এ ছাড়া সকাল ১০টার ওই নির্ধারিত সময়ে বিআইসিসির উইন্ডি টাউনে কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সামগ্রিক উন্নয়ন পর্যালোচনা করা হয়।
এ ছাড়া দুপুর ২টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিভাগ, টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর পর্যালোচনা হয়।
এসব আলোচনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিশেষ করে স্টেক হোল্ডারা বিদ্যমান মন্ত্রণালয়গুলোর বেশ কিছু কাজের সমালোচনা করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো কোনো বিষয়ের দায় স্বীকার করে সেগুলো শোধরানোর আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, ২০০০ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ণ লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সবগুলো সূচকেই কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে এটি শেষ হওয়ার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতিসংঘ। এ লক্ষ্যমাত্রায় নিদিৃষ্ট করে ১৭টি বিষয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কাঙ্খিত উন্নতি ঘটানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ সারাবিশ্বের উন্নয়ন টেকসই করতে ১৭টি লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে। প্রতিটির ক্ষেত্রে রয়েছে আবার একাধিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) হচ্ছে। সব দেশ থেকে সব ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সমৃদ্ধ জীবনের প্রণোদনা প্রদান, সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ন্যায্য ও মানসম্মত শিক্ষা এবং সবার জন্য আজীবন শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা, লিঙ্গসমতা অর্জন এবং কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন সহজলভ্য করা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সবার জন্য সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক শক্তিপ্রাপ্তি (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি) নিশ্চিত করা, সবার জন্য মানসম্মত কাজ ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান, সহজ অবকাঠামোর মাধ্যমে বৃহৎ, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহ প্রদান, বিভিন্ন দেশের মধ্যে এবং দেশের অভ্যন্তরে বৈষম্য কমিয়ে আনা, শহর ও মানুষের বসবাসকে একীভূত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং টেকসই করা, সম্পদের উৎপাদন এবং সেবন/ব্যবহারকে টেকসই করা, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ও এর প্রভাব রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, সাগর, মহাসাগর ও সমুদ্রসম্পদের টেকসই উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা, প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার টেকসই ব্যবহারকে উৎসাহ ও সুরক্ষা প্রদান, বনসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও মরুময়তা প্রতিরোধ, বনজসম্পদের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা, টেকসই উন্নয়নে সমাজের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, সবক্ষেত্রে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এসডিজির বাস্তবায়নে এবং টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা।
শুক্রবার সম্মেলনের শেষ দিনে শিল্প মন্ত্রণালয়, সড়ক যোগাযোগ ও মহাসড়ক বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর পর্যালোচনা হবে। এ সেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সারাবাংলা/এমএস/এমআই