Thursday 21 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে পোশাকের ক্রয়াদেশ, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন স্বপ্নের হাতছানি

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২৫ ২২:০৬

বাংলাদেশের পোশাক কারখানা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের পোশাক রফতানিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পুরাতন ক্রেতা তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিতে নতুন নতুন ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান বা জিজ্ঞাসা) করছেন। কোনো কোনো পোশাক মালিক বলছেন, এরই মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেড়েছে। উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় বাড়তি কাজের চাপ রয়েছে বড় বড় পোশাক কারখানাগুলোতে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কে ভালো অবস্থানে থাকায় দেশের পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে। আগে বাজারটিতে কাজ করেননি এমন অনেক উদ্যোক্তাও এখন দেশটির কাজ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান দুই বাজার। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই দেশের পোশাক রফতানির সবচেয় বড় গন্তব্য। দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাকের ২০ শতাংশ রফতানি হয়ে থাকে। গেল এপ্রিলে ট্রাম্পের পালটা শুল্ক আরোপের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা ক্রয়াদেশ স্থগিত করে। পরে পালটা শুল্কারোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলে ক্রয়াদেশের স্থগিতাদেশও উঠে যায়। এর পর জুলাইয়ে ট্রাম্প শুল্কের বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে এলে নতুন করে ক্রয়াদেশ স্থগিত হতে থাকে।

তবে বাণিজ্য নিয়ে দর কষাকষি শেষে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র। গেল ১ আগস্ট ট্রাম্পের এই বার্তা দেশের পোশাক খাতের জন্য সম্ভাবনা নিয়ে আসে। এর পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতাদের যেসব কাজ হতো, তা পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি করে থাকে স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখন পর্যন্ত ভালো অর্ডার আসছে। ভালো ব্রান্ডগুলোর অর্ডার বেড়েছে। তবে লো (নিম্ন) ব্রান্ডের অর্ডার কম দেখতে পাচ্ছি। বড় ফ্যাক্টরিগুলোতে কাজের চাপ বেড়েছে। উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অর্ডার বেশি রয়েছে। আর ওভেনে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেড়েছে। তবে নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে অর্ডার বাড়েনি। ইউডিতে দেখা যাচ্ছে, খানিকটা নেগেটিভ রেট রয়েছে। তার মানে অর্ডার যে খুব বেশি আসছে তাও নয়।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে চীনের শুল্ক এখনো ৩০ শতাংশ। এটি ১২ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত এই রেট থাকছে। ভারতের ক্ষেত্রে এখনো শুল্ক ২৫ শতাংশ। ২৭ আগস্ট ভারতের শুল্পের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। তবে প্রতিযোগ সব দেশের তুলনায় শুল্কে আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা ও নতুন স্বপ্ন দেখার পথ তৈরি করেছে। তবে, শুল্ক বাড়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে পোশাকের চাহিদা সাময়িকভাবে কিছুটা হলেও কমবে। ফলে স্বল্পকালীন পোশাকের ক্রয়াদেশ সেভাবে না বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে অনেকটাই বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আরও পড়ুন: স্থগিত হচ্ছে ক্রয়াদেশ, বন্ধ হতে পারে ২ শতাধিক পোশাক কারখানা

ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কের কারণে গেল জুলাইয়ে ৪০ লাখ ডলারের একটি ক্রয়াদেশ স্থগিত হয় প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেলের। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ালমার্ট’র হয়ে ক্ল্যাসিক ফ্যাশন এ কাজ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটিকে। ক্ল্যাসিক ফ্যাশন প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেলকে ই-মেইলে ক্রয়াদেশ স্থগিতের কথা জানিয়েছিল। জানতে চাইলে প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্লাসিক ফ্যাশনের যে অর্ডার স্থগিত হয়েছিল, সেটি জর্ডানে শিফট করেছে। ফলে সে অর্ডার আর ফেরত আসবে না।’

নতুন সম্ভাবনার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো ভালো কোনো রেজাল্ট পাচ্ছি না। নো গুড নিউজ। আমরা শুনছি, ভালো খবর আসবে। তবে কোনো ভালো নিউজ পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের জন্য যে ডিউটি বাড়িয়েছে, এতে সেখানকার অর্ডার আমাদের এখানে আসতে পারে- এমনটা বলা হচ্ছে। তবে আমরা এখনো সেরকম কিছু পাইনি। আমরা সেজন্য অপেক্ষা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতার ইনকোয়ারি এসেছে, তবে যে প্রাইস দিয়েছে, সেই প্রাইসে কাজ করলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিলই উঠবে না।’

এ বিষয়ে দেশের নিটওয়্যার পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে নতুন অর্ডার আসবে বলে আমরা আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন করে ইনকোয়ারি আসছে। দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’

জানতে চাইলে দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতনিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সারাবাংলাকে বলেন বলেন, ‘এখনো অর্ডার আসেনি। আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাতারাতি কিছু হবে না। এর সঙ্গে অনেকগুলো রিকোয়ারমেন্ট জড়িত রয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো। এবং ব্যাংকিং খাতের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অর্ডার কতটুকু বেড়েছে-নির্দিষ্ট করে এখনই তা বলা যাবে না। প্রথম হচ্ছে ব্যবসাটা যাবে না, যাচ্ছে না। বরং, দেশে নতুন করে ক্রয়াদেশ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কতটুকু অর্ডার বেড়েছে, দেশের পোশাক খাত কতটুকু এগোলো- একটি মৌসুম গেলে বলা যাবে।’

প্রসঙ্গত, দেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শীর্ষ ১০ পোশাক রফতানিকারক দেশ হচ্ছে- ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পালটা শুল্ক এখন ২০ শতাংশ। বিশ্বে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের শুল্কের হারও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একই। আর চীনা পণ্যে শুল্ক ৩০ শতাংশ।

বর্তমানে ভারতের জন্য শুল্কের হার ২৫ শতাংশ থাকলেও আরও ২৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে পোশাক রফতানিতে ভারতের সামনে এখন বড় বাধা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক। প্রতিযোগী সক্ষমতায় এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানিতে আরও বড় সম্ভবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

ক্রয়াদেশ পোশাক যুক্তরাষ্ট্র স্বপ্ন হাতছানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর