ঢাকা: দেশে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বর্তমানে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালাগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় গৃহকর্মী শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই শুধু নীতিমালার বাস্তবায়ন নয়, বরং সময়োপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সংলাপ। চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় এ আয়োজন করে উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), এডুকো-বাংলাদেশ ও শাপলা নীড়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি সমাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এজন্য এখনই একটি কার্যকর আইন প্রণয়ন জরুরি। আমরা গৃহকর্মী কল্যাণ ও সুরক্ষায় মনিটরিং কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি এবং শিশুশ্রমকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি।’
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘বর্তমান শ্রম আইন, শিশু আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ অন্যান্য আইনের বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় গৃহকর্মী শিশুরা সুরক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকাতেও গৃহকর্মের কাজ অন্তর্ভুক্ত নয়। এজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন জরুরি।’
সভাপতির বক্তব্যে এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম বলেন, ‘সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ধরনের শিশুশ্রম নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে গৃহকর্মী শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন অপরিহার্য।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন কমিশনের গবেষণা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ মনিরা সুলতানা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোছা. সালমা আক্তার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউমি ইয়াগিশিতা মাসুদা, এডুকোর কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ প্রমুখ।
সংলাপটি সঞ্চালনা করেন এডুকো বাংলাদেশের ম্যানেজার আফজাল কবীর খান এবং এএসডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউকেএম ফারহানা সুলতানা এতে অংশ নেন।
আলোচকরা বলেন, ‘গৃহকর্মী শিশুদের অধিকারের প্রশ্নটি শুধু মানবিক নয়, এটি একটি জাতীয় উন্নয়ন ও সামাজিক সুবিচারের বিষয়।’ তারা শিশুদের জন্মনিবন্ধন সহজ ও বিনামূল্যে করার উদ্যোগকেও স্বাগত জানান এবং জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।