ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইমো ও টেলিগ্রামে রিয়েল সার্ভিস, হানি ট্র্যাপ ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ঘটনায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। এদিন রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার সাতজন হলেন- মো. বিপ্লব খান (৩৩), ফারিন তানহা তোফা (২৯), সম্পা আক্তার (২৪), শাহ মোহাম্মদ জোবায়ের অভিক (২৩), মো. আল-মাসুদ (৩২), মোছা. মনিকা আক্তার (১৮) ও মো. আবু সুফিয়ান (২৭)।
তালেবুর রহমান বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট থেকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে শরীয়তপুরের জনৈক মো. রহমান এবং বান্দরবানের মো. মনির উদ্দিন মুহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের এসপিসি থেরাপি সেন্টারে সেবা নিতে আসেন। সেখানে পাশাপাশি বেডে থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় ও পরে ঘনিষ্ঠতা। পেশায় গাড়িচালক মো. রহমান এবং কক্সবাজারের পেকুয়া সাবমেরিন চায়না প্রজেক্টে দোভাষী হিসেবে কর্মরত মনির উদ্দিনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। গত ১৯ আগস্ট মো. রহমানের জন্য চাকরির প্রস্তাব নিয়ে মনির তাকে ফেসবুকে একটি গাড়ি চালকের চাকরির বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন। মো. রহমান সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে তাকে মিরপুরের বারেক মোল্লার এলাকায় দেখা করতে বলা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মো. রহমান ও মনির উদ্দিন মিরপুর ৬০ ফিট, বারেক মোল্লার এলাকায় পৌঁছালে এক যুবক তাদের সঙ্গে দেখা করে। চাকরির বিষয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি তাদের একটি অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ব্যাটারিচালিত টমটমে করে মিরপুর শেওড়াপাড়ার একটি ভবনের ৬ তলায় নিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে তাদের একটি কক্ষে বসিয়ে ওই যুবক তার সঙ্গী নয় থেকে ১০ জন পুরুষ ও ছয় থেকে সাতজন নারীকে ডেকে আনেন। এর পর তারা মো. রহমান ও মনির উদ্দিনকে আটক করে মারধর শুরু করেন। এ সময় তিনজন নারীকে তাদের পাশে বসিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়। প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে নগদ ১১ হাজার টাকা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা এবং মো. রহমানের একটি নোকিয়া মোবাইল ও মনিরের রেডমি-সি-৩ সহ দু’টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল হাতিয়ে নেয়। ঘটনাটি কোথাও প্রকাশ করলে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিবির একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় ভিকটিম মনির উদ্দিনের হাতিয়ে নেওয়া রেডমি-সি-৩ মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, আসামিদের ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক, ইমো এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে রিয়েল সার্ভিস ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মর্মে জানা যায়। আত্মসম্মানের ভয়ে অনেক ভিকটিম পুলিশের কাছে অভিযোগ না করায় এই চক্রটি তাদের প্রতারণা অব্যাহত রেখেছিল। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।’