Saturday 23 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যাংক কোম্পানি আইনে বাদ যাচ্ছে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’, কমছে পর্ষদের আকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১৯:৩০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৫ ২৩:২৬

ঢাকা: আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের অংশ হিসেবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের কয়েকটি ধারা নতুন করে সংশোধনের উদ্যাগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যাংক কোম্পানি আইন থেকে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’র বিধান অপসারণ করা হচ্ছে। তবে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’র বিধান অপসারণ করা হলেও ঋণ খেলাপিদের জন্য বিধি-নিষেধ বহাল থাকছে, ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে গ্রুপ কোম্পানির ঋণ গ্রহণের শিথিলতা বাতিল হচ্ছে এবং ছোট হচ্ছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আকার।

জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সংশোধিত খসড়া অনুমোদন করেছে। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয় খসড়াটি পর্যালোচনা করছে এবং আগামী সেপ্টেম্বরে এটি উপদেষ্টা পরিষদ-এর সভায় উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদে ‍চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যমান আইনে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপী’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- “ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতা অর্থ এরূপ ‘খেলাপী ঋণগ্রহীতা’ যিনি-(১) নিজের বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে গৃহীত অথবা বেনামে বা অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীর নামে গৃহীত ঋণ বা বিনিয়োগ বা অন্য কোন আর্থিক সুবিধা বা উহার অংশ বা উহার সুদ বা মুনাফা তাহার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধ না করেন; বা (২) ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত জামানত ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক-কোম্পানীর লিখিত পূর্বানুমতি ব্যতীত হস্তান্তর বা স্থানান্তর করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী গৃহীত ঋণ পরিশোধ না করেন।”

পাশাপাশি বিদ্যমান আইনে স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের তালিকা করতে প্রতিটি ব্যাংকে দুটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কমিটি স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করবে এবং অপর একটি কমিটি তালিকা চূড়ান্ত করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছা খেলাপিদের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। স্বেচ্ছা খেলাপির তালিকার বিষয়ে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি তালিকা চূড়ান্ত করার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবেন এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

কোনো ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা হতে অব্যাহতি প্রাপ্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্যাংক- কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না।

জানা যায়, ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। যে কারণে গত ২০২৩ সালে আইনটি কার্যকর করা হলের কাউকে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তাই এটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সর্বোচ্চ পরিচালক সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ জন করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮ জন হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান থাকছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে পারেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে যাচাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন করা হবে।

এছাড়া পরিচালকের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে একই পরিবারের ৩ জন সদস্য এবং আত্মীয়দের মনোনয়নে আরও ২ জন পরিচালক হিসেবে থাকতে পারেন। সংশোধিত আইনে একই পরিবারের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৩ জন থেকে ২ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। পরিবারের সংজ্ঞাও প্রসারিত করা হয়েছে, যেখানে শ্বশুরপক্ষ এবং ভাই-বোনের স্বামী/স্ত্রীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত আইন অনুযায়ী, গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কোনো একটি প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলে ওই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও আর ঋণ নিতে পারবে না। বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যবসায়িক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলেও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণ পেতে পারে।

সারাবাংলা/আরএস

ইচ্ছাকৃত খেলাপি ব্যাংক কোম্পানি আইন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর