Sunday 24 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয়শঙ্করের বার্তা
ভারতের ‘রেড লাইন’ কৃষকদের স্বার্থে, কোনো আপস নয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৩ আগস্ট ২০২৫ ২২:০২ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৫ ০০:১৭

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যখন কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের কিছু ‘রেড লাইন’ বা অলঙ্ঘনীয় সীমা রয়েছে, যা থেকে ভারত কোনোভাবেই সরবে না।

শনিবার (২৩ আগস্ট) ইটি ওয়ার্ল্ড লিডারস ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সিদ্ধান্তকেও দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন।

এস. জয়শঙ্কর বলেন, ‘যারা একটি ব্যবসাবান্ধব আমেরিকান প্রশাসনের হয়ে কাজ করে, তাদের অন্য কাউকে ব্যবসা করার জন্য অভিযুক্ত করাটা বেশ হাস্যকর। যদি আপনাদের ভারত থেকে তেল বা পরিশোধিত পণ্য কিনতে সমস্যা হয়, তাহলে কিনবেন না। কেউ আপনাদের জোর করছে না। ইউরোপ কেনে, আমেরিকাও কেনে। যদি আপনাদের ভালো না লাগে, তবে কিনবেন না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ভারতের ও বিশ্বের উভয় দেশের জন্যই উপকারী। এটি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।‘ তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারত স্বাধীনভাবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া চালিয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অর্থায়নের অভিযোগে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে দুই দেশের মধ্যে একমাত্র বাণিজ্য ইস্যু এটিই নয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তীকালীন বাণিজ্য চুক্তির জন্য বেশ কয়েক দফা আলোচনা করেছে, কিন্তু কোনো সমঝোতা হয়নি। কারণ ভারত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়, যা নিয়ে আলোচনা বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে।

জয়শঙ্কর আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আলোচনা এখনো চলছে এবং কোনো স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটেনি। মূল কথা হলো আমাদের কিছু ‘রেড লাইন’ আছে। আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি, কারণ কেউ বলেনি যে আলোচনা শেষ।’

তিনি বলেন, ‘‘রেড লাইন’গুলো হলো এমন কিছু বিষয়, যেখানে ভারত সরকার কোনোভাবেই আপস করবে না। আমাদের জন্য, এই ‘রেড লাইন’ মূলত আমাদের কৃষকদের এবং কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ছোট উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করা। সরকার হিসাবে, আমরা আমাদের কৃষক এবং ছোট উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এই বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়। এখানে আমরা কোনো আপস করতে পারি না।’’

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দাবি ছিল যা ভারতীয় সরকারের জন্য ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছিল। এই দাবিগুলো ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি সম্পর্কিত। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাজারে আমেরিকান দুগ্ধজাত, হাঁস-মুরগি এবং ভুট্রা, সয়াবিন, গম, ইথানল, ফল এবং বাদামের মতো কৃষি পণ্য প্রবেশের জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু ভারত, একটি কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায়, এই পণ্যগুলোর বাজার উন্মুক্ত করতে রাজি হয়নি।

ভারতের এই প্রতিরোধের প্রধান কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (GM) ভুট্রা এবং সয়াবিন উৎপাদন করে। ভারত জিএম খাদ্য শস্য আমদানি করার অনুমতি দেয় না এবং এগুলোকে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে করে।

দুগ্ধজাত পণ্য আরেকটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র, যা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা সরবরাহ করে। অনেক ছোট এবং ভূমিহীন কৃষক এই খাতের ওপর নির্ভরশীল।

যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, দেশ কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করবে না। তিনি তার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছিলেন, ‘কৃষক, জেলে এবং পশুপালকদের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ক্ষতিকর নীতির বিরুদ্ধে মোদি একটি দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছেন।’

সারাবাংলা/এইচআই

এস. জয়শঙ্কর তেল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর