ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ জানিয়েছেন, ইরান বেশ কয়েকটি দেশে অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের প্রায় দুই মাস পর তিনি এই মন্তব্য করলেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। ইরানি সংবাদ সংস্থা ইয়ং জার্নালিস্টস ক্লাবের সঙ্গে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নাসিরজাদেহ এই কথা বলেন।
নাসিরজাদেহ বলেন, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন’ এখনো ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর আমাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই কারখানাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ও ঘোষণা করা হবে।’
নাসিরজাদেহ বলেন, ‘গত এক বছরে নতুন ধরনের উন্নত ও কৌশলী ওয়ারহেড পরীক্ষা করা হয়েছে। জুনে ১২ দিনের ওই সংঘাত যদি আরও দীর্ঘ হতো, তাহলে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রুখতে পারত না।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ যদি ১৫ দিন চলত, তাহলে শেষ তিন দিনে ইসরায়েলিরা আমাদের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করতে পারত না। এই কারণেই ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।‘
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ওই সংঘাতের সময় তেহরান তাদের সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্র ‘কাসেম বাসির’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। তিনি এটিকে ‘সবচেয়ে নির্ভুল অস্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন। কাসেম বাসির একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার।
নাসিরজাদেহর এই মন্তব্যের সঙ্গে ২১ আগস্ট ইরানের নৌ মহড়া মিলে যায়। ওই মহড়ায় দেশটি ওমান উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাত শেষ হওয়ার পর এটি ছিল ইরানের প্রথম সামরিক মহড়া।
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞার কারণে তেহরানের আধুনিক অস্ত্র আমদানির ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে দেশটি নিজেদের পুরনো অস্ত্র ব্যবস্থার দেশীয় উন্নয়ন ও আপগ্রেডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। এতে সিনিয়র কমান্ডার এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যাতে ইসরায়েলে বহু মানুষ মারা যায়। ২৪ জুন ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান হয়।