ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান চিত্র নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ও চিকিৎসক ডা. তাসনিম জারা। তিনি বলেছেন, দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন কারো জন্যই কার্যকর নয়—না ডাক্তারদের জন্য, না রোগীদের জন্য। ফলে এই পুরো ব্যবস্থাকেই নতুন করে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য’ বিষয়ক একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে ডা. তাসনিম জারা বলেন,“আমাদের দেশে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে অনেক সিস্টেম ফাংশন করছে না। নার্সদেরও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ থাকলেও মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের অনেক মেডিকেল কলেজ আছে, কিন্তু সেসব কলেজে ইন্টার্নশিপের সুযোগ নেই, রোগী দেখার সঠিক ব্যবস্থা নেই। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই যদি না খোলে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে রোগী দেখে শিখবে? ফলে তারা ডাক্তার হয়ে যাচ্ছে, অথচ বাস্তবে রোগী দেখার অভিজ্ঞতাই নেই।”
তিনি বলেন, এভাবে যদি মেডিকেল শিক্ষার মান চলতে থাকে তাহলে দেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। শুধু চিকিৎসা শিক্ষার্থীরাই নয়, রোগীরাও বঞ্চিত হচ্ছে।
‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে সমাধান আসবে না’
ডা. তাসনিম জারা আরও বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। এতে ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদান সহজ হবে এবং একইসঙ্গে রোগীর চিকিৎসা ব্যয়ও কমে আসবে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষ সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না।
তিনি উল্লেখ করেন, “যারা অর্থবান তারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বা বিদেশে যাচ্ছেন। আবার অনেক তরুণ চিকিৎসক দেশে চাকরির সুযোগ না পেয়ে বিদেশে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। এর মানে হচ্ছে, এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা আসলে কারো জন্যই ফিট না।”
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: উন্নয়নের মূল ভিত্তি
তাসনিম জারা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন শিক্ষার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই দুই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার না করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তার মতে, শুধু ডিগ্রির ওপর জোর না দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরি করাই শিক্ষা খাতের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা যেন শিক্ষা শেষে বাস্তব জীবনে কাজ করতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
ডিজিটালাইজেশনের ওপর জোর
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন আনতে হবে। বিপুল তরুণ জনসংখ্যাকে দক্ষ জনবলে রূপান্তর করতে হবে। শুধু চাকরির জন্য নয়, তারা যেন সচেতন নাগরিক হয়ে দেশের দায়িত্ব নিতে পারে, সে দিকেও নজর দিতে হবে।”
‘জনগণের জন্য নয়, অভিজাতদের জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা’
আলোচনায় তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনগণের জন্য নয় বরং ধনী ও ক্ষমতাবানদের জন্য সাজানো। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, সাধারণ মানুষ ও নিম্নবিত্তরা কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামো থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামের অভাব মারাত্মকভাবে দৃশ্যমান।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, “পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা পাঁচ মিনিটে সাজানো সম্ভব না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি ঢেলে সাজাতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা যেন সবার জন্য সমানভাবে প্রাপ্য হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করতে হবে। সেইসঙ্গে রোগী ও চিকিৎসক উভয়পক্ষ যেন বঞ্চিত না হয়, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য খাত ও শিক্ষা খাতকে জাতীয় উন্নয়নের মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করে এ খাতে বড় ধরনের সংস্কার জরুরি। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা সর্বজনীন করতে হবে।