Monday 25 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিসিআইসি’র দরপত্রে কঠিন শর্ত
পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দিতে তোড়জোড়ের অভিযোগ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ আগস্ট ২০২৫ ২২:২৯ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৫ ২৩:৩৬

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশে সারের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা এবং মজুদ থেকে ডিলার পর্যন্ত সারের সকল তথ্য অনলাইনে নিয়ে আসতে ‘অনলাইন বেইজড ফার্টিলাইজার ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম’ নামক একটি দরপত্র আহ্বান করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। তবে দরপত্রে এমন কিছু শর্ত যোগ করা হয়েছে যা দেশের হাতেগোনা কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানি ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। একটি গোষ্ঠী বা একক প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিতে এমন শর্ত যোগ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

এ সব শর্ত পরিবর্তন করতে দেশের সফটওয়্যার খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) থেকে বিসিআইসিতে চিঠি দেওয়া হলেও তা আমলে না নিয়ে দরপত্রের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ‘সিএমএমআই লেভেল-৩ সার্টিফিকেট’ এর শর্ত যোগ করার কারণে দরপত্রেই বেশিরভাগ কোম্পানি অংশ নিতে পারেনি এমনটি স্বীকার করেছে খোদ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশনও। আর আপত্তি ওঠায় কিছু সময়ের জন্য ফাইল আটকে রাখলেও অবশেষে বেশিরভাগ কোম্পানিকে বঞ্চিত করেই ফের এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে শর্তযুক্ত এই দরপত্র।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল ‘ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, ইমপ্লিমেনশন অ্যান্ড মেইনটেন্স অব এ কমপ্রেহেনসিভ অনলাইন বেইজড ফার্টিলাইজার ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম ফর বিসিআইসি’ শীর্ষক এই দরপত্রটি আহ্বান করে বিসিআইসি। এই দরপত্রে সিএমএমআই লেভেল-৩ সার্টিফিকেট, বছরে ২০ কোটি টাকার টার্ন ওভার, ১০ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ও সারাদেশে ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা- এমন সব শর্ত যোগ করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ওঠে ‘সিএমএমআই লেভেল-৩ সার্টিফিকেট’ থাকার শর্তটি নিয়ে।

জানা গেছে, দেশে সিএমএমআই লেভেল -৩ সার্টিফিকেট রয়েছে ১২টি কোম্পানির। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি সরকারি কোনো দরপত্রে অংশ নেয় না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই শর্ত যোগ করার মাধ্যমে শতাধিক সফটওয়্যার কোম্পানিকে প্রথমেই দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার এই সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। তিনবছর পর পর এই সনদ নবায়ন করতেও প্রায় একই রকম অর্থের খরচ করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি অনুদানে হওয়া কয়েকটি প্রকল্পে এই শর্ত যোগ করা হলেও সরকারি অর্থায়নে করা কাজে এই শর্ত যোগ করার নজির খুব একটা নেই। পছন্দের কোম্পানি বা একটি গোষ্ঠীকে সুযোগ দিতেই এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল বিসিআইসি’র সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও হেড অব আইসিটি ডিভিশনের মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে একটি চিঠি দেয় বেসিস। সে সময় বেসিসের অ্যাসোসিয়েট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন রাফেল কবির। রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বেসিস থেকে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। আমাদের অনেক সদস্য (প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন) এসে অভিযোগ দেয়। সারাদেশে আমাদের সদস্য হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার, এরমধ্যে সিএমএমআই লেভেল-৩ সনদ আছে মাত্র ১২টি কোম্পানির।’

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়- প্রকল্প ছোট, ছোট কাজ; কিন্তু সিএমএমআই লেভেল-৩ এর মতো কঠিন শর্ত দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব শর্ত পূরণ করতে পারে দেশের মুষ্টিমেয় সফটওয়্যার কোম্পানি। সরকারি দফতরগুলো এসব শর্তের মাধ্যমে মেনিপুলেট করতে পারে, তাদের নির্বাচিত কোম্পানিগুলোকে কাজ দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এসব শর্তের কারণে আগের সরকারের আমলে যারা কাজগুলো করছে, এখনও তারা কাজ পাচ্ছে। এসব শর্ত দিয়ে তাদের লোকজনই তাদের কাজ দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২ থেকে ১৪ কোটি টাকার এই দরপত্রে মাত্র ১২টি কোম্পানি অংশ নেয়। এর মধ্যে সিএমএমআই লেভেল- ৩ সনদ আছ এমন কোম্পানি সাতটি। বাকি পাঁচ কোম্পানি অংশ নিলেও শর্তের কারণে বাদ পড়ে। পিপিআর রুলস অনুযায়ী, সর্বনিম্ন চারটি কোম্পানিকে শর্টলিস্ট করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মাত্র তিনটি কোম্পানিকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার অভিযোগও বিসিআইসিতে পৌঁছেছে, যে প্রতিষ্ঠানটি গত সরকারের আমলেও বিসিআইসির কাজ পেয়েছে।

জানা গেছে, কার্যাদেশ পেতে সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ডাইনামিক সলিউশন ইনোভেটর, সিনেসিস আইটি ও সার্ভিস ইঞ্জিন। এর মধ্যে ডাইনামিক এককভাবে দরপত্রে অংশ নিলেও বাকি দুই প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রে যৌথভাবে অংশ নেয়। দরপত্রে অংশ নেওয়া ১২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি কোম্পানির সিএমএমআই লেভেল-৩ সার্টিফিকেট রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ডাইনামিক, সিনটেক, সেবপো, সিএসএল, ডিডিসি, সিনোসিস ও ই-জেনারেশন। সিএমএমআই লাইসেন্স না থাকায় বাকি পাঁচ প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়েও সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠে আসতে পারেনি। শুধু এই শর্তই নয়, আরও বেশ কিছু শর্ত যোগ করে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। যা নিয়ে অপত্তি তুলে চিঠি দেয় বেসিস।

বিসিআইসি দরপত্রে শর্ত দেয়, সর্বনিম্ন ১০টি প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন পাঁচটি সরকারি প্রকল্প হতে হবে এবং একটি প্রকল্পে তিনবছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই শর্তটি সংশোধন করার অনুরোধ জানায় বেসিস। সংস্থাটি বলছে, গত তিন বছরের মধ্যে পাঁচটি সরকারি প্রকল্প সম্পন্ন করার শর্তটি অযৌক্তিক ও বর্জনীয়। এবং এটি শিল্পের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

চিঠিতে, সিএমএমআই লেভেল-৩ এর শর্তটি বাদ দেওয়া পরামর্শ দেয় বেসিস। এর যুক্তিতে সংগঠনটি জানায়, সিএমএমআই লেভেল-৩ সহ বহু সনদ থাকার এই শর্তটি সামগ্রিকভাবে দেশীয় যোগ্য প্রতিষ্ঠানের এই দরপত্রে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে এবং এই শর্তটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।

দরপত্রে শর্ত হিসেবে বলা হয়, কমপক্ষে তিনটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে কমপক্ষে দু’টি অ্যাপ্লিকেশন সরকারি প্রতিষ্ঠানের। বেসিস’র বিপরীতে কমপক্ষে দু’টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অভিজ্ঞতা ও এর মধ্যে একটি অ্যাপ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের; এমন শর্তই যৌক্তিক। বিসিআইসি বলছে, দেশের সকল বিভাগে সফটওয়্যার বাস্তবায়ন প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত তিন বছরের মধ্যে সমাপ্তির সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

বেসিস এই শর্তটি বাদ দেওয়া কথা বলে। এর যুক্তি হিসাবে বেসিস বলছে, দেশের সকল বিভাগে সফটওয়্যার বাস্তবায়ন প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতার ‘প্রয়োজনীয়তা প্রকল্পের মূল প্রযুক্তিগত উদ্দেশ্যের সঙ্গে ভুলভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ’। এই ধরনের মানদণ্ড সিস্টেম আর্কিটেকচার, ডেটা ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তিগত বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

এসব শর্ত কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা জানতে চাইলে বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বেশিরভাগ সফটওয়্যার কোম্পানির যেহেতু সিএমএমআই লেভেল-৩ সার্টিফিকেট নেই, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সরকারি অর্থায়নে হওয়া সরকারি কাজের ক্ষেত্রে এই সনদ থাকার শর্ত রাখা ঠিক নয়। বেশি কোম্পানি যাতে অংশ নিতে পারে, দরপত্রে এমন শর্তই থাকা উচিত। অনেক বড় কোম্পানি হতে হবে, বছরে ২০ কোটি টাকার টার্ন ওভার থাকতে হবে, ১০ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল থাকতে হবে- এমন শর্ত দেওয়া ঠিক নয়। ২০ কোটি টাকার টার্নওভার আছে, দেশে এমন আইটি কোম্পানি কয়টি আছে! এসব শর্তের চেয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া কোম্পানির অভিজ্ঞতা আছে কিনা, টেকনিক্যাল কোয়লিফিকেশন আছে কিনা তা দেখা বেশি জরুরি।’

অভিযোগ উঠেছে, বিসিআইসির আইসিটি বিভাগের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ইমরান আহমেদ ও ডাইনামিক সলিউশন ইনোভেটর এর পরষ্পরের যোগসাজশে টেন্ডারে নিজেদের পক্ষে নিতে এমন সব শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর আগেও ডাইনামিক সলিউশন গতবছর বিসিআইসি থেকে সাত কোটি টাকার আরেকটি কাজ পেয়েছে। গত বছরও ওই দরপত্রের সময় ইমরানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল বলে তিনিই জানিয়েছেন।

তবে পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা তার নেই বলেও জানান তিনি। তার ভাষায়, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। এককভাবে আমি তো নয়-ই, কেউ কাজ পাইয়ে দিতে পারে না।’ ডাইনামিক সলিউশনও এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। এই রেঞ্জের (১০ থেকে ১২ কোটি টাাকর) কাজে সিএমএমআই লেভেল-৩ শর্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই যুক্ত করে থাকে। গতবছর আমরা এখানে কাজ পেয়েছি এটি সত্য। আমরা অনেক মন্ত্রণালয়েই কাজ পেয়েছি। অনেক প্রতিষ্ঠানেই আমরা একটি কাজের পর আরেকটি নতুন কাজ পেয়েছি।’

বিসিআইসি’র পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) ও আইসিটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক মো. দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিএমএমআই লেভেল-৩ সম্পর্কিত শর্তের বিষয়ে আপত্তির কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়ার ফাইল কিছু সময়ের জন্য থামানো হয়েছিল। পুনরায় টেন্ডারে যেতে চেয়েছিলাম। চার থেকে পাঁচদিন ফাইল আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে আর যুক্তি দিয়ে পেরে উঠতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘এই শর্তের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারেনি এটি সত্য। কিন্তু সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি, সে কারণেই পরে এর কার্যক্রম ফের এগিয়ে নেওয়া হয়। আমাদের লক্ষ্য জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়া। একক কোনো কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে এসব শর্ত দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ সত্য নয়। এখানে অনিয়ম বা অন্য কিছু হয়নি। নির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য এই শর্ত যুক্ত করা হয়নি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এর চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’ আর এই দরপত্রের ব্যত্যয় নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথিরিটির সিইও এস এম মঈন উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দিলে, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

কঠিন শর্ত কাজ তোড়জোড় দরপত্র পছন্দের কোম্পানি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্পোরেশন বিসিআইসি বেসিস