ঢাকা: ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আর নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না। সরি আব্বু, আপনার নিষেধ অমান্য করেই বের হলাম।’ এমন দরদমাখা চিঠি লিখে আর ফেরেননি শহিদ শাহরিয়ার খান আনাস। কিন্তু তার সেসব কথা এখনও কাঁদায় হাজারও মানুষকে। আজও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীর ডায়াসে দাঁড়িয়ে নাতির লেখা শেষ চিঠি নিয়ে কাঁদলেন আনাসের নানা মো. সাঈদুর রহমান। চাইলেন হত্যাকারীদের বিচারও।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নবম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল আজ। আর এ মামলায় ২৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহিদ আনাসের নানা। এদিন বিকেলে ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বিচারিক প্যানেল তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
সাঈদুর রহমান বলেন, ‘আমি পেশায় ব্যবসায়ী। তবে এখন সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি শহিদ শাহারিয়ার খান আনাসের নানা।’ তিনি বলেন, ‘গতবছর ৫ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে আমরা ঘুম থেকে উঠে আনাসকে বাসায় পাইনি। আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি করি। এক পর্যায়ে পড়ার টেবিলে একটি চিঠি পায় তার মা। মা-বাবার কাছেই চিঠিটি লিখেছে আনাস।’- এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাঈদুর রহমান।
ওই চিঠি পড়েই আনাস আন্দোলনে গিয়েছে বলে জানতে পারেন তারা। ৬৩ বছর বয়সী এই সাক্ষী বলেন, ‘আনাসের সঙ্গে একটি সিমবিহীন বাটন ফোন ছিল। ওই মোবাইল ফোনে আমাদের পরিবারের চার-পাঁচটি নম্বর সেভ করা ছিল। দুপুর দেড়টার দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি কল আসে আনাসের মায়ের মোবাইলে। জানতে চাওয়া হয় আমাদের পরিবার থেকে কেউ আন্দোলনে গিয়েছে কি না। তখন আনাসের মা বলে- আমার ছেলে আনাস আন্দোলনে গিয়েছে। তখন অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়- আপনারা স্যার সলিমুল্লাহ মিডফোর্ড মেডিকেল হাসপাতালে আসেন। পরে আনাসের মা-বাবাসহ আমরা তিনজন মিডফোর্ড হাসপাতালে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে গিয়ে স্ট্রেচারের ওপর আনাসকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে দ্রুত লাশ নিয়ে যেতে আমাদের বাধ্য করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পর আমরা রিকশায় করে আনাসের লাশ বাসায় নিয়ে আসি। জানাজা শেষে ওই দিনই জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’
আনাসের নানা বলেন, ‘আমি পরবর্তীতে জানতে পারি চানখারপুলের কাছে নবাব কাটারা এলাকায় আনাস গুলিবিদ্ধ হয়। ওইদিন একই এলাকায় আমার নাতিসহ ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। তৎকালীন সরকারের পুলিশ বাহিনী তাদের গুলি করে। আর এসব ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ যারা গুলি করেছে তাদের দায়ী করছি। একইসঙ্গে তাদের ফাঁসি চাই।’