ময়মনসিংহ: জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি জিআই (Geographical Indication) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওয়েবসাইট চেক করে আজই বিষয়টি জানা গেছে।
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত ১১ জুলাই ফুলবাড়ীয়ার লাল চিনিকে জিআই পণ্যের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সেই ধারাবহিকতায় লাল চিনি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা বিশাল গর্বের। এই চিনির সুখ্যাতি দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়বে।’
রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই এই চিনি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে শুধুমাত্র আখের রস থেকে তৈরি হয়, যা এটিকে একটি বিশেষ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাদ্যপণ্যে পরিণত করেছে। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান পাওয়া যায় এই চিনিতে।
জিআই ট্যাগ ফুলবাড়িয়ার লাল চিনির অনন্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ও গুণগত মানের স্বীকৃতি, যা এটিকে একটি বিশেষ ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে। এই চিনি আখের রস থেকে তৈরি হয় এবং এতে কোনো রাসায়নিক থাকে না, যা এর পুষ্টিগুণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় স্থানীয় কৃষক এবং উৎপাদকরা লাভবান হবেন এবং পণ্যটির বিপণন সহজ হবে বলছেন স্থানীয়রা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাল চিনি মাড়াই মৌসুম শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসে, চলে চৈত্র মাস পর্যন্ত। মৌসুমে ওই এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। এটি আখের রস থেকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে এর রং লাল হয় এবং এতে গুড়ের উপাদান থাকে। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ি লাল মাটি-অধ্যুষিত কালাদহ, এনায়েতপুর, রাঙামাটিয়া, নাওগাঁও, বাকতা ও রাধাকানাই ইউনিয়নে একসময় প্রচুর পরিমাণ আখ আবাদ হতো। আখমাড়াই মেশিনে আখের রস বের করে জ্বালঘরে জ্বাল করার পর মাটিতে গর্ত করে তৈরি চুলায় কড়াই বসিয়ে রস জ্বাল দেওয়া হয়।
রস পূর্ণ জ্বাল হওয়ার পর কড়াইসহ চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের কাঠি দিয়ে বিরামহীন ঘুটতে থাকে, যতক্ষণ না শুকনো ধুলার মতো আকার ধারন করে। আখের গুণগত মান খারাপ হলে ধুলার মতো না হয়ে গুটি গুটি আকার ধারণ করে। ধুলার মতো বা গুটির মতো যা-ই হোক, স্থানীয় ভাষায় এটাই লাল চিনি। চিনি তৈরি করার জন্য যে অস্থায়ী গৃহ নির্মাণ করা হয়, তাকে বলা হয় জ্বালঘর। দেখতে ধূসর খয়েরি হলেও সাদা চিনির বিপরীতেই হয়তো লাল চিনি নামকরণ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আখ চাষের গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এজন্য কৃষকদের মধ্যে আখের নতুন জাত সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাত উন্নত হলে চিনির উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে। ফলে কৃষক লাভবান হবে। আখচাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হলে কৃষকরা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন। চলতি মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ আবাদ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম জানান, অন্য কোনো এলাকা থেকে দাবি কিংবা আপত্তি না থাকায় ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। নতুন করে সনদের জন্য আবেদন করা হয়েছে। লাল চিনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় ফুলবাড়িয়া উপজেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার সুনাম অনেকাংশে বেড়েছে।