ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়েছে ২৬ আগস্ট। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর। তবে এই নির্বাচনে কোন পদে কে জয়ী হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে আগেভাগেই চলছে জল্পনা-কল্পনা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী শিক্ষার্থীদের ভোট যাদের পক্ষে যাবে, তারাই নির্বাচিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডাকসুর অতীতের পরিসংখ্যানও তাই বলে। এদিকে, এবার নারী প্রার্থীরাও অন্যান্য বারের তুলনায় এগিয়ে আছেন এবং আলোচনায়ও আছেন।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, এ বছর মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন জগন্নাথ হলে, ২ হাজার ২২২ জন। এর পরই রয়েছে বিজয় একাত্তর হল, যেখানে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩৭ জন।
অন্যান্য হলগুলোর মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে ১ হাজার ৯৯৮ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৯৫৭ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১ হাজার ৭৬২ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১ হাজার ৭৫১ জন, সূর্যসেন হলে ১ হাজার ৪৯৯ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৪০২ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৩৭৭ জন, কবি জসীম উদ্দীন হলে ১ হাজার ৩০৩ জন, অমর একুশে হলে ১ হাজার ২৯৫ জন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১ হাজার ৬০৬ জন ভোটার রয়েছেন। ছাত্রদের মোট ভোটের হার ৫২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রোকেয়া হলে, ৫ হাজার ৬৭৬ জন। এর পর যথাক্রমে কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪ হাজার ৪৩৪ জন, শামসুন নাহার হলে ৪ হাজার ৮৪ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২ হাজার ৬৪০ জন এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ১০৩ জন ভোটার রয়েছেন। ছাত্রী ভোটার মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রী ভোট প্রায় দুই হাজার কম হলেও অধিকাংশ প্রার্থীদেরই চিন্তা নারী শিক্ষার্থীদের ভোটকে ঘিরেই। কারণ হিসেবে প্রার্থীরা বলছেন, ছাত্র হলগুলোর শিক্ষার্থীদের হাতের নাগালে সহজেই পাওয়া যায় এবং তাদের একটা বড় অংশ কারও না কারও সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। তাই তাদের ভোট সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাচ্ছে।
এদিকে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যার অনুপাতে হলে থাকছেন অনেক কম শিক্ষার্থী। কারণ তাদের জন্য হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। তাদের সঙ্গেও অধিকাংশ প্রার্থীরই সরাসরি যোগাযোগ কম। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো- অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা কাকে পছন্দ করছেন সেটা। তাদের সেই পছন্দের বিষয়টা এখন পর্যন্ত কেউ ধরতে পারছেন না। তবে প্রত্যেক প্রার্থী নিজের প্রতি সমর্থন আদায়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
প্রার্থিতায়ও বেড়েছে নারী শিক্ষার্থী
প্যানেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থীর স্থান হয়েছে ইমি ও বসুর নেতৃত্বে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের একাংশ ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলে। সেখানে সর্বোচ্চ ১২ জন নারী প্রার্থীর স্থান হয়েছে। উমামা-সাদীর নেতৃত্বে গড়া ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলে ভিপিসহ মোট ছয় পদে, বাগছাসের প্যানেলে ছয়, ছাত্রশিবিরের প্যানেলে চার, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদে তিন, অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪ প্যানেলে তিন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনে তিন, ছাত্রদলে দুই এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেলে একজন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
নারী প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম সানজিদা আহমেদ তন্বী। তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ডাকসুতে গবেষণা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে এ পদে প্রার্থী দেয়নি ছাত্রদল-বাগছাসসহ ছয়টি প্যানেল। এ পদে তার আরও আটজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও ক্যাম্পাস জুড়ে তার নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্য পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে অভ্যুত্থানের পর ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব পদ থেকে এবং পরে বৈষম্যবিরোধীর পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। এরপর স্বতন্ত্র প্যানেল গঠন করেন উমামা। এ প্যানেলে কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটারিয়া সম্পাদক সুমী চাকমা, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ইসরাত জাহান নিঝুম এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন নুসরাত জাহান নিসু। এ ছাড়া সদস্য পদে নওরীন সুলতানা তমা নির্বাচন করছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আশরেফা খাতুন। তিনি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্যানেলে তিনি ছাড়াও আরও ছয় নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে আনিকা তাহসিনা, কমনরুম ও ক্যাফেটারিয়া সম্পাদক পদে মিতু আক্তার, সদস্য পদে রিফতি আল জাবেদ, তাপসী রাবেয়া, রওনক জাহান, মাহফুজা নওয়ার নওরীন।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ ও এনসিপি থেকে বহিষ্কৃত যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকারের নেতৃত্বে গড়া প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’-এ এজিএস পদে নির্বাচন করছেন ফাতেহা শারমিন (এ্যানি)। তাছাড়া রুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটারিয়া সম্পাদক পদে ফারজানা আক্তার মিতু, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে মেহেরিন আফরোজ মাইশা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের দেওয়া প্যানেল ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেল থেকে সাবিনা ইয়াসমিন জিএস পদে নির্বাচন করছেন। এছাড়া, তিন বাম সংগঠনের নেতৃত্বে গড়া ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলে অদিতি ইসলামকে এজিএস প্রার্থী করা হয়েছে। প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ফাহমিদা আলম এবং সদস্য পদে তর্পিতা ইসলাম অব্ধি।
চারজন নারী প্রার্থী আছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলে। কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটারিয়া সম্পাদক পদে অ্যাকটিভিস্ট উম্মে সালমা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ফাতিমা তাসনীম ঝুমা। এছাড়াও, এই প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রীসংস্থার সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক সাবিকুন্নাহার তামান্না ও আফসানা আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সদস্য পদে।
ছাত্রদলের প্যানেলে দুজন নারী স্থান পেয়েছেন। চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটারিয়া-বিষয়ক সম্পাদক পদে এবং সদস্য পদে মেহেরুন্নেসা কেয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গড়া ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে নারী প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জুয়াইরিয়া আখতার তামান্না, কমনরুম, পাঠকক্ষ ও ক্যাফেটারিয়া সম্পাদক পদে জাকিয়া আক্তার এবং সদস্য পদে মোসা. হাবিবা নির্বাচন করবেন।
তাছাড়া, স্বতন্ত্রভাবে এজিএস পদে লড়বেন অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০-২১ সেশনের শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থী সানজানা আফিফা (অদিতি)। তিনি বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।