Wednesday 27 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মামলার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর
জুলাই বিপ্লবের সাহসের প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন আবু সাঈদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৮:১৪ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩৩

শহিদ আবু সাঈদ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: চব্বিশের জুলাই এক রক্তাক্ত নাম। বাংলা পঞ্জিকায় তারিখটি ছিল আষাঢ়ের শেষ দিন। একদিন পরই শুরু হয় শ্রাবণ। সেদিন সকালে রংপুরের আকাশে ঝরছিল বৃষ্টি। কিন্তু সব উপেক্ষা করে ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তরের এ শহর। এ যেন তারুণ্যের বুকে জ্বলে ওঠা প্রতিবাদের বারুদ। কিছুক্ষণ পরই হামলা চালায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আর পুলিশ সদস্যরা। সেদিন পুলিশের বৃষ্টি গুলিতে পানি ঝরেনি, ঝরেছিল নিরপরাধ ছাত্র-জনতার রক্ত।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বুধবার (২৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি। এর মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক বিচার। আর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

বিজ্ঞাপন

সূচনা বক্তব্যে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন বেরোবির শিক্ষার্থীসহ স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যা ছিল তারুণ্যের দ্রোহযাত্রা, প্রতিবাদ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নগরীর লালবাগ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এগিয়ে এলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় অসংখ্য সশস্ত্র পুলিশ। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এছাড়া, পাঁচ নম্বর আসামি মো. আরিফুজ্জামান ওরফে জীবনের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশ সদস্য স্টিল ও কাঠের লাঠি দিয়ে আবু সাঈদের মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথা থেকে রক্ত বের হয়।’

বেলা যখন দুপুর। ঠিক তখনই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় আওয়ামী মদদপুষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আর পুলিশের যৌথ হামলায় মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ওই দিন আষাঢ়ের বাদল কিংবা মেঘ না থাকলেও বৃষ্টি ঝরেছিল। সে বৃষ্টি গুলির। তাই বৃষ্টিতে পানি না ঝরলেও ঝরেছিল নিরপরাধ ছাত্র-জনতার রক্ত। সেখানেই জুলাই বিপ্লবের সাহসের উজ্জ্বল প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন শহিদ আবু সাঈদ। পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েও দুহাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে যেন বলতে চায়- এভাবে মানুষ মারা চলবে না। সাধারণ ছাত্রদের বাঁচাতে চাইলেন যিনি, ঠিক তার বুকেই তাক করা হলো বন্দুকের নল।

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ২টা ১৭ মিনিট। আন্দোনের খবর সরাসরি সম্প্রচার করছিল এনটিভি। ঠিক তখনই গর্জে ওঠে মামলার আট নম্বর আসামি পুলিশের সাবেক এএসআই মো. আমির হোসেনের রাইফেল। যে অস্ত্র কেনা হয়েছিল আবু সাঈদের ট্যাক্সের টাকায়, শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যাবহারের জন্য; আর সে অস্ত্রই বিদ্ধ করল আবু সাঈদকে। তাই প্রথম গুলিটি যখন আবু সাঈদের পেটে লাগে, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান। আবার বুক প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। তখনই তাকে পর পর দুই রাউন্ড গুলি করেন ৯ নম্বর আসামি সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। ফলে রাস্তার ডিভাইডার পার হয়ে বসে পড়েন আবু সাঈদ। একজন সহযোদ্ধা তাকে মাটি থেকে তোলার জন্য ধরতে গেলে আবার পড়ে যান।

আবু সাঈদকে নেওয়ার সময় তাদের লক্ষ্য করে আবার গুলি চালায় পুলিশ। এতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাওহিদুর হক সিয়ামের শরীরের বাঁ দিকটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। প্রায় ৬০টি ছররা গুলি তার মাথা, মুখ-হাত, বাহু, পেট, কোমর ও পায়ের বাঁ দিকে বিদ্ধ হয়। আবু সাঈদকে নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্ররা রিকশায় করে রওনা দেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সহযোদ্ধাদের বাহুডোরেই ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। তার দেহের গন্তব্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হলেও আত্মার গন্তব্য ছিল আরশে আজিমের দিকে।

এতে আরও বলা হয়, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সংগৃহীত প্রমাণ কেবল বিশ্বাসযোগ্যই নয়। বরং, অকাট্য ও স্বতন্ত্র ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তার ঊর্ধ্বে। এই ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত এসব প্রমাণ অস্পষ্ট তথ্যের বিচ্ছিন্ন টুকরো নয়। বরং একটি অবিচ্ছিন্ন ও সুদৃঢ় প্রমাণশৃঙ্খল, যার প্রতিটি অংশ পরবর্তী অংশকে আরও দৃঢ়তর করে। এই প্রমাণের সামগ্রিকতা হচ্ছে চাক্ষুষ সাক্ষ্য, ডিজিটাল রেকর্ড, সরকারি যোগাযোগ ও ফরেনসিক প্রতিবেদন। মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ৪৬ জন। জব্দ তালিকা আটটি। জব্দ তালিকার সাক্ষী ছয়জন। ভিডিও ক্লিপ ২০টি। বিশেষজ্ঞ সাক্ষী চারজন। অডিও ক্লিপ দুটি ও তদন্ত কর্মকর্তা চারজন। এছাড়া, মোট সাক্ষী ৬২ জন।

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

আবু সাঈদ জুলাই বিপ্লব শহিদ সাহস