ঢাকা: রফতানিমুখী বাণিজ্যে নানা ধরনের চাপ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও অভ্যন্তরীণ শ্রমিকদের দাবির মুখে বিদ্যমান শ্রম আইন শিথিল হচ্ছে। সংশোধিত আইনে একটি শিল্প কারখানায় পাঁচটি শ্রমিক সংগঠন থাকতে পারবে এবং কোনো শিল্প-কারখানায় ২০ শতাংশ শ্রমিকের পরিবর্তে ২০ জন শ্রমিকের সমর্থন থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। এছাড়া বর্তমান আইনে শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি ৫ বছর পরপর বাড়ানোর বিধান রয়েছে। এটি কমিয়ে ৩ বছরে নামিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই শ্রম আইন সংশোধনের কাজ শেষ হতে পারে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ৬০ সদস্যের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা ও ঐকমত্য হয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। টিসিসি-তে সরকার, মালিক ও শ্রমিক- তিন পক্ষের ২০ জন করে সদস্য রয়েছেন।
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রমসচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান, টিসিসি’র সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বৈঠকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এবং কানাডীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে গেলে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগে। সংশোধিত আইনে ‘শতাংশ’ আর রাখা হচ্ছে না। তিন পক্ষই এ বিষয়ে একমত হয়েছে।
বৈঠকে শ্রমিকপক্ষ বলেছে, ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা একাধিক হলে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হবে যৌথ দর-কষাকষি প্রতিনিধিদল বা সিবিএ। বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা বড় হলে বর্তমানে তিনটি শ্রমিক সংগঠন করার বিধান রয়েছে। এখন পাঁচটি করা যাবে।
অন্যান্যের মধ্যে বর্তমান আইনে আছে, কোনো প্রতিষ্ঠান তার শ্রমিকদের সুবিধার জন্য ভবিষ্য তহবিল গঠন করবে। সংশোধিতব্য আইনে ১০০ স্থায়ী শ্রমিক থাকলেই মালিকপক্ষ ভবিষ্য তহবিল গঠন করতে বাধ্য থাকবে। শিশুশ্রমের জন্য নিয়োগকর্তাকে জরিমানার পরিমাণ ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে।
এছাড়া সংশোধিত আইনে নতুন কয়েকটি ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- কোনো নিয়োগকর্তা কোনো শ্রমিককে তার জন্য বিপজ্জনক কোনো কাজ করাতে বাধ্য করতে পারবেন না। শ্রমিকরা যদি আইন ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতির বিধান অনুযায়ী কোনো সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেন, তাহলে নিয়োগকর্তা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। এছাড়া শ্রমিকদের কালো তালিকা আর করা যাবে না।
তবে বৈঠকে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করা এবং দুর্ঘটনায় হতাহতের জন্য ক্ষতিপূরণ বাড়ানো- এসব দাবি মালিকপক্ষরা মানেন নি।
বৈঠকে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, কোনো কারখানায় অনেক শ্রমিক মারা গেলেও মালিকদের শাস্তি ওই চার বছর জেল। এর সংশোধন দরকার।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকে বলেন, একটি পক্ষ চায়, শ্রম আইন সংশোধনের কাজটা পিছিয়ে যাক। পরের সরকার এসে করুক। আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। শ্রম আইন সংশোধন কাজের বাকি প্রক্রিয়া কাল থেকেই শুরু করতে হবে।
শ্রমসচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সেপ্টেম্বর জুড়ে এ নিয়ে কাজ হবে। আর অক্টোবরের মধ্যে আইন সংশোধন হয়ে যাবে।