ঢাকা: দেশে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে নতুন টিকা টিসিভি (টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন) ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। ক্যাম্পেইন-২০২৫ সফল করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং ‘ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’–এর যৌথ অ্যাডভোকেসি প্রোজেক্ট এর আওতায় সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর সহায়তায় দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা, প্রতিবন্ধকতা এবং করণীয় বিষয়ে এই আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জীবনরক্ষাকারী টিকাদানের মাধ্যমে মা ও শিশুস্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে, মা ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে এবং দেশের প্রতিটি অঞ্চলে টিকাদানের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার ৮১.৫ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে, যা শুধু বাংলাদেশ, নেপাল, রুয়ান্ডা, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মালাউই- এই ৬টি দেশেই অর্জিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত দুই দশকে ৫ কোটিরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর প্রায় ৯৪,০০০ শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে নতুন টিকা টিসিভি ক্যাম্পেইন চালু করতে যাচ্ছে এবং ২০২৬ সালে আরও নতুন টিকা ইপিআই কর্মসূচির আওতায় যুক্ত হবে। টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইপিআই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্যে “টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫” আওতায় টিসিভি টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এই টিকা প্রদান করা হবে।
ইপিআই কার্যক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এখনও শূন্য, যার মধ্যে HA, AHI, HI, EPI টেকনিশিয়ান বা পর্যবেক্ষকসহ ইপিআই সদর দফতরের শূন্য পদ ৪৩ শতাংশ। ৪৫ জেলায় টিকাদান কর্মী নিয়োগ এখনও সম্পন্ন হয়নি। জেলা পর্যায়ের কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ানের ৫৩ শতাংশ পদ শূন্য রয়েছে। যদি স্বাস্থ্য অধিদফতর সেপ্টেম্বরের শুরুর মধ্যে টিকা ক্রয়ের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব করে, তবে ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকে কিছু টিকার মজুদ ফুরিয়ে যাবে। এছাড়া ভৌগোলিক অবস্থার ভিত্তিতে টিকাদান কেন্দ্র এবং কর্মীদের সুষ্ঠু বণ্টন নেই।
তিনি বলেন, দুর্গম ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত টিকাদান কেন্দ্র ও কর্মী নেই। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় কার্যকর টিকাদান কৌশল এবং পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কার্যক্রমে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া জনসংখ্যা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ না হওয়ায় টিকাদানের লক্ষ্য নির্ধারণে অসামঞ্জস্যতা এবং টিকা বরাদ্দে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যক্ষ তদারকির অভাবের কারণে টিকার অপচয়, টিকা না পাওয়া শিশু এবং ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নাম্বার দিয়ে নিচের লিংকে প্রদত্ত ফর্মে নিবন্ধন করতে হবে। লিংক:https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম রাজিব (ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, প্রোকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই, ইপিআই, স্বাস্থ্য অধিদফতর) এবং ডা. নাসরিন আক্তার (নির্বাহী পরিচালক, রাড্ডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টার এবং বাংলাদেশ সিএসও কোয়ালিশন ফর হেলথ অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য)।