ঢাকা: জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আগেই নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ প্রতিক্রিয়া জানান দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিচার ও সংস্কার। সেই প্রত্যাশা পূরণে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে। আমাদের মতো অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সেখানে মতামত দিয়েছে। সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই সনদের খসড়া আমাদের হাতে এসেছে। আমরা লিখিত মতামত কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। তবে খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।’
আদীব আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে, আবার কেউ গণভোট, কেউ সংবিধান সংস্কার সভা প্রস্তাব করেছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় সনদ বাস্তবায়ন হবে তা নির্ধারণ না করেই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা জনগণের প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করার শামিল।’
প্রধান উপদেষ্টার একতরফা সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলোচনা চলাকালেই প্রধান উপদেষ্টা হঠাৎ করে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে আমাদের বিস্মিত করেছিলেন। তবে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা তা মেনে নিয়েছিলাম। তখন প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন জরুরি হবে বলে আমরা ভেবেছিলাম।’
কিন্তু বাস্তবে সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংস্কার ও বিচারের রোডম্যাপ প্রকাশ করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার আগে সরকার সংস্কার অগ্রগতির একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। কিন্তু অজানা কারণে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নির্ধারিত হয়নি। তারপরও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলো, যা আসলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ।’
সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল ইসলাম আদীব স্পষ্ট করেন যে, এনসিপি কোনোভাবেই নির্বাচনবিরোধী নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্রকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নিতে হলে নির্বাচন অপরিহার্য। তাই নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা ইতিবাচক। তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি যত দ্রুত নির্ধারিত হবে, নির্বাচনের প্রস্তুতিও তত দ্রুত গ্রহণ করা সম্ভব হবে। সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না করে নির্বাচনি প্রস্তুতি নেওয়া ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করতে পারে। এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।’