ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সতর্ক করে বলেছেন, ‘মনে করবেন না যে আপনারা ক্ষমতায় চলে এসেছেন। এখনো ক্ষমতার ধারে কাছেও আসেননি।’
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণ, ঐক্যবদ্ধ লড়াই এবং জনগণের আস্থা অর্জনের ওপর জোর দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো অনেক ষড়যন্ত্র আছে। সেগুলোকে অতিক্রম করতে হবে ঐক্য ও ভালো কাজ দিয়ে। অনেকেই মনে করছে বিএনপি ক্ষমতায় এসে গেছে, তাই তারা দুর্বৃত্তায়ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এটা সঠিক নয়। আমাদের নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল হতে হবে, যেন কেউ বিএনপিকে খারাপ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, জনগণ পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তন বিএনপির কাছ থেকেই প্রত্যাশা করছে। এজন্য নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে সততা ও ত্যাগের উদাহরণ হয়ে দাঁড়াতে হবে।
গণতন্ত্রের লড়াই ও ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়া ছয় বছর কারাগারে ছিলেন, অমানবিক কষ্ট সহ্য করেছেন। তারেক রহমান ১৬ বছর ধরে প্রবাসে আছেন। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম হয়েছেন।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন ‘সারাটা জীবন কি আমাদের ব্যর্থ হয়ে যাবে? আমরা গণতন্ত্রকে এমন জায়গায় নিতে চাই, যার মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ হবে, গুটি কয়েকজনের নয়।’
বিএনপি মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন হবেই। ঘোষণার সময়েই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যদি নির্বাচন বন্ধ হয় বা না হয়, তাহলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। নানা মহল থেকে ফ্যাসিবাদ ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
সংস্কার প্রসঙ্গে ফখরুল মনে করিয়ে দেন, ‘বাংলাদেশে সব সংস্কারের পথপ্রদর্শক বিএনপি। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এনেছিলেন।খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘শুধু ছাত্ররাই ছিল না; মা-বোন, বৃদ্ধ, শ্রমজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল বলেই আমরা সাফল্য পেয়েছি। ভবিষ্যতে এ সংগ্রামের ওপর কবিতা, গান, উপন্যাস লেখা হবে বলেও আশা করছি।’
ফখরুল স্বীকার করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের হতাশা আসে। কয়েকদিন আগে হতাশার কথা বলেছিলাম, কাছের মানুষ ভর্ৎসনা করেছে। আসলে দুর্বৃত্তদের কারণে লড়াই ম্লান হয়ে যাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই হতাশা আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মতভেদ রাজনীতির অংশ হলেও এখনকার পরিবেশে জনগণ বিভ্রান্তিতে আছে। ‘মানুষ প্রশ্ন করছে—নির্বাচন হবে তো?’—এই শঙ্কা থেকেই অস্থিরতা বাড়ছে।’