ঢাকা: টেলিকম সেবার মান নিশ্চিত করতে ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ (কিউওএস) নীতিমালা সংশোধন করেছে সরকার। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে ড্রাইভ টেস্ট মানদণ্ডে অপারেটরদের ৪-জি (ফোর-জি) এর সর্বনিম্ন গতি হতে হবে ১০ এমবিপিএস। একই সঙ্গে কমানো হয়েছে কলড্রপের সর্বনিম্ন হার। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে সেবার বিভিন্ন মানদণ্ড সূচক। এসব মানদণ্ডে অপারেটরদের বাধ্যতামূলকভাবে মাসিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি গতি ও সেবার মানের তদারকি বাড়াতে বিটিআরসি এখন থেকে প্রতি মাসে আগের মাসের নেটওয়ার্ক পারফরমেন্স ও হেলথ চেক করবে, যা সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হবে।
রোববার (৩১ আগস্ট) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন ও আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য সংশোধিত এ নীতিমালা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সংশোধিত নীতিমালায় দেশের টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিম্নমানের হওয়ায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক একটি নতুন কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্ক তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এই চর্চা নতুন। তবে টেলিকম সেবার মান নিশ্চিত করতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা একটা আন্তর্জাতিক চর্চা। বাংলাদেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৪-জি-তে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ করেনি। ফলে সেবার মান নিম্নমুখী এবং কোয়ালিটি অব সার্ভিস বেঞ্চমার্ক খুব বাজে ছিল, যা সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত করা হয়েছে। নতুন লাইসেন্স পলিসিতে ‘লাইসেন্স অব্লিগেশন’ এবং ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’-এর কথা বলা হয়েছে। এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) বেঞ্চমার্ক টেলিযোগাযোগ খাতে নাগরিকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে সেবাদাতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে সেবার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। শিগগির হালনাগাদ এ নির্দেশিকা জারি করা হবে।
অন্যান্যের মধ্যে সংশোধিত কিউওএস অনুযায়ী, গ্রাহক অভিযোগ সমাধানে কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি। নেটওয়ার্ক-সম্পর্কিত নয় এমন অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে শতভাগ সমাধান করতে হবে। এছাড়া গ্রাহকসেবা সেন্টারে আসা ৯০ শতাংশ কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং সব কল ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে রিসিভ করতে হবে।
ফাইবার নেটওয়ার্কে সেবার সমস্যা মেট্রো (মহানগর) এলাকায় ৪ ঘণ্টা এবং গ্রামীণ এলাকায় ৬ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে হবে।
সংশোধিত কিউওএস-এ যা রয়েছে-
নেটওয়ার্ক লেভেল (পর্যায়ে) এ কল সেটাপ সাকসেস রেটের হার অন্তত ৯৯ শতাংশ হতে হবে, আর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তা ৯৮ শতাংশ;
কলড্রপের হার টুজি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ-এর মধ্যে সীমিত রাখা;
ডেটা সেবায় ফোরজি সংযোগ সফলতার হার ৯৯ শতাংশ এবং জেলা পর্যায়ে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ থাকা;
গড় ব্যবহারকারী ডাউনলোড গতি নেটওয়ার্ক পর্যায়ে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৫ এমবিপিএস এবং জেলা পর্যায়ে ২ দশমিক ৫ এমবিপিএস থাকা;
ড্রাইভ টেস্টে ভয়েস সেবায় কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৮ শতাংশ বা তার বেশি, কলড্রপ (অটোমোড) ২ শতাংশ-এর মধ্যে এবং ভোল্টি (ভয়েস ওভার এলটিই প্রযুক্তি)-এর জন্য গড় ব্যবহারকারী মান সূচক ন্যূনতম ৩.৫ হওয়া এবং ডেটা সেবায় ডাউনলোড স্পিড সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস এবং আপলোড ২ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেবার মান তদারকিতে মাসিক রিপোর্টিং
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী অপারেটরদের এখন থেকে প্রতি মাসে তাদের নেটওয়ার্কের মান সংক্রান্ত মূল সূচক (কেপিআই ) জমা দিতে হবে। এসব সূচক মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অ্যাক্সেসিবিলিটি, রিটেইনেবিলিটি ও নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রিটি।
এছাড়া সংশোধিত এই কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনি এবং এনটিটিএনদের জন্য করা হয়েছে। ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনিতে ফিক্সড টেলিফোন সেবায় কলড্রপ ১ শতাংশ-এর মধ্যে, কল সেটআপ সাফল্যের হার ৯৯ শতাংশ-এর বেশি এবং কল সংযোগ সময় ৬ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
ইন্টারনেট সেবায় লোকাল ট্র্যাফিকের সংযোগ সময় সর্বোচ্চ ২৫ এমএস, ডেটা হারানোর হার ১ শতাংশ-এর মধ্যে এবং নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা ৯৯ শতাংশ বা তার বেশি হতে হবে। গ্রাহকের প্রান্তে ডাউনলোড-আপলোড স্পিড সাবস্ক্রাইব করা গতির অন্তত ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।
এনটিটিএন অপারেটরদের ক্ষেত্রে ডেটা হারানো সর্বোচ্চ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ল্যাটেন্সি ৫ এমএস এবং সংযোগের জিটার ৩ এমএসের এর মধ্যে রাখতে হবে।
