ঢাকা: আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়েছে, তেমনিভাবে জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা উচিত।
রোববার (৩১ আগস্ট) যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জামায়াত নেতা দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতার আলোকে দেশের বিভিন্ন দলের কার্যক্রম এবং তাদের প্রভাব নিয়ে বিশদ মতবিনিময় হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের উচ্চপদস্থ নেতারা।
ডা. তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী কার্যক্রম দেশীয় সংবিধান ও জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জাতীয় পার্টিও যদি একই ধরনের কার্যক্রম চালায়, তবে আইনসম্মতভাবে তাদের কার্যক্রমও সীমিত করা যেতে পারে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি, জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সরকারের নিয়ম ও সংবিধান মেনে চলে। কোনো দল যদি গণতান্ত্রিক আদর্শের বিপরীত কর্মসূচি নেয়, সেটি চলতে দেওয়া উচিত নয়।’
জামায়াতের এই নেতা আরও অভিযোগ করেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল জটিলতা সৃষ্টি করছে।’ ডা. তাহের বলেন, ‘জুলাই সনদের মাধ্যমে জনগণের দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও আন্দোলনের ফলাফল সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল এই বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা দৃঢ়ভাবে এ সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পক্ষে আছি এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অটল থাকব।’
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের বলেন, ‘জুলাই সনদের ক্ষেত্রে ১৯টি বিষয় নিয়ে আমরা সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হয়েছি। এগুলো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অল্পসংখ্যক দল আমাদের ঐকমত্য পোষণের ১৯ বিষয় বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি দিতে কিছুটা বাধা দিচ্ছে। তারা বলছে, আগামী নির্বাচিত সরকার আসলেই এগুলো বাস্তবায়ন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী সরকার এসে যদি এটা বাস্তবায়ন করে তাহলে আমরা ঐকমত্য কমিশনে এই সময় নষ্ট করলাম কেন? তাহলে এই সংস্কারটা তো পরবর্তী সরকারই উদ্যোগ নিতে পারত। জুলাইয়ের যে চেনতা আমরা সেটাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি বলি আমাদের ইমানের তিনটি অংশ। তার একটি হচ্ছে মুখে স্বীকৃতি দেওয়া, হৃদয়ে ধারণ করা এবং কার্যে পরিণত করা। এই তিনটা হলেই ঈমান পরিপূর্ণ। আমাদের চার্টার যেগুলো হয়েছে তারও তিনটি অংশ। একটি অংশ ঐকমত্যে পৌঁছা। দুই নম্বর হচ্ছে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং তিন নম্বর হচ্ছে এটা বাস্তবায়ন করা।’
তিনি জানান, বৈঠকে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার পরিস্থিতি নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কিছু দলীয় জবরদস্তি ও দফতর হস্তক্ষেপের কারণে জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাই দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সব রাজনৈতিক দলের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।