ঢাকা: বিএনপির ৪৭ প্রতিষ্ঠাবির্ষকী আজ। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দল গঠন করেন। প্রতিষ্ঠার পর সাড়ে চার দশকের মধ্যে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে সবচেয়ে প্রতিকূল সময় পার করেছে দলটি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। তিনটি মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে, গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারও ফুরফুরে মেজাজে বিএনপি।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার আগে, ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতির পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিলে তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন আব্দুস সাত্তার।
পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে বিএনপি গঠন করেন জিয়াউর রহমান। তিনি এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দলটির প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থী সবধরনের লোক ছিলেন।
বিএনপির আত্মপ্রকাশের দিন ১৮ সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন জিয়াউর রহমান। দল প্রতিষ্ঠার সাড়ে ৫ মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০৭টি আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি। ১৯৯০ পর দেশের মোট চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিএনপি দু’টিতে জয়লাভ করে। বাকি দু’টিতে বিরোধীদলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
১৯৯১ এর সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ১৪২টি আসনে জয় পায়। পরে তারা জামায়তে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। ফলে বিএনপি সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনের ২৮টি নিজেরা রেখে বাকি দু’টি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে প্রায় ১৯ বছর দলটি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। বর্তমানে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
কর্মসূচি
রোববার (৩১ আগস্ট) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে বিএনপি। এতে দলের সিনিয়র নেতাসহ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।
১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে বিএনপি। এতে অংশ নেবেন দলটির মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এদিন দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি হবে।
২ সেপ্টেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করবে দলটি। ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌরসভায় আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। প্রকাশ করা হবে পোস্টার। সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিএনপির উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক করা হবে। সুবিধাজনক সময়ে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ অভিযান, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজন করেব বিএনপি।