Tuesday 02 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নীলফামারীতে সেনাবাহিনী-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪০ | আপডেট: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:০২

নীলফামারী: নীলফামারীর উত্তরা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় হাবিবুর রহমান হাবিব (২১) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত হাবিব তিনি সদর উপজেলা সংলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে এবং উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল (স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিট) কোম্পানির কর্মী।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তানজিরুল ইসলাম ফারহান বলেন, “মৃত অবস্থায় হাবিবকে হাসপাতালে আনা হয়। তার বুকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব নয়।”

বিজ্ঞাপন

নীলফামারী সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম আর সাঈদের মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শ্রমিকরা জানান, মোট ২৩ দফা দাবি নিয়ে গত শনিবার (৩০ আগস্ট) থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা। প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জেনারেল ম্যানেজারের পদত্যাগ, পুরাতন শ্রমিকদের ছাটাই বন্ধ করে পূর্বের লেঅফ সিস্টেমে ফেরত আনা,নামাজের সময় নিশ্চিত করা, স্যালারি কার্ড বাতিল,কোন শ্রমিক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে লেঅফ পদ্ধতিতে বের করতে হবে, পুরাতন শ্রমিকদের পূর্বের আইডিতে পুনর্বহাল করাসহ ২৩টি দাবিতে আন্দোলন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে শ্রমিকরা ইপিজেড গেটে প্রবেশ করতে গেলে সেনাবাহিনী সেখানে অবস্থান নেয়। তখন এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে সেনাবাহিনী।

এ বিষয়ে নারী শ্রমিক আখি আক্তার বলেন, “আমরা প্রতিদিনের মতো সকালে অফিসে যাই। গিয়ে দেখি গেট বন্ধ, সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে আছে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমরা নারী শ্রমিকরা পড়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু কারও খোঁজ নেওয়া হয়নি। আর আমাদের ভাইয়েরা যদি কোম্পানির ক্ষতি করতো, তাহলে সেটা আলাদা বিষয় ছিল। কিন্তু কোনো ক্ষতি না করেও সাধারণ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হলো কেন? সেনাবাহিনী যে গুলি চালালো, তারা কার অনুমতি নিয়ে গুলি চালালো আমরা সেটা জানতে চাই। আমাদের এখন একটাই দাবি সেনাবাহিনী গুলি চালালো কোন অনুমতিতে, তা জানাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি এভারগ্রিন কোম্পানিতে কাজ করি। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি নিয়ম থাকে কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করলে তাকে নির্দিষ্ট একটা পরিমাণ টাকা দিয়ে বের করে দিতে হবে। কিন্তু এখানে তা করা হয়নি। হঠাৎ করেই বের করে দেওয়া হচ্ছে। আমি একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর ধরে চাকরি করছি, অথচ কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে আমাকে যদি বের করে দেওয়া হবে তবে সেটা কী অন্যায় নয়। আমরা ন্যায্য বেতন-ভাতা চাই, সেটি আমাদের দিতে হবে।”

অন্যদিকে শ্রমিক সাদিকুল ইসলাম বলেন, “আমি নাইট ডিউটি শেষে সকাল ৬টা দশ মিনিট পর্যন্ত ভেতরে ছিলাম। তখনও গেট খোলা ছিল। এরমধ্যেই সেনাবাহিনী ভেতরে প্রবেশ করে গেট বন্ধ করে দেয়। ধীরে ধীরে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকলে সেনারা বলে আজ ৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটবে। আমি সকাল ৬টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলাম। আমরা সবাই একটাই কথা বলেছি আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। অভিযোগ দেওয়ার তিন দিন পার হলেও এখনো কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো জবাব আসেনি। সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও জানিয়েছিলাম, ব্যাপজা ও এভারগ্রিন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এসে আমাদের দাবির কাগজ হাতে নিলেই আমরা সরে যাব।”

সংঘর্ষের মূল কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গতকাল রাতে মাইকিং করা হয়েছিল যে এভারগ্রীন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। অথচ মাসের প্রথম তারিখে যে বেতন দেওয়ার কথা, সেই বেতন দেওয়া হয়নি। দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তারা বলছে অফিস বন্ধ, অথচ তাদের নিজস্ব লোকজন ভেতরে প্রবেশ করছে আবার বেরও হচ্ছে। আমাদের শ্রমিকদের সমস্যা হলে আমরা কোথায় বিচার চাইবো? ব্যাপজার কাছে অভিযোগ দিলে কোনো সমাধান পাই না। যে গিয়ে অভিযোগ করে, তার চাকরি থাকে না। আমরা যে শ্রম দেই, সেটা কি শ্রম নয়? আমরা কি ন্যায্য বিচার পাব না?”

সারাবাংলা/ইআ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর