চট্টগ্রাম ব্যুরো : স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দফতরের ‘অস্ত্রাগার’ লুটের ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজিত একদল শিক্ষার্থী অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে ১৩০টি রাম দা নিয়ে গেছে বলে একজন সহকারী প্রক্টরের দেওয়া একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অস্ত্রগুলো উদ্ধারে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) চবি প্রক্টরের কার্যালয়ের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে অস্ত্রগুলো জমা দেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে সংঘাতের ঘটনার পর গত তিনদিনেও কোনো মামলা হয়নি। তবে অস্ত্র লুটের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে ও পরদিন রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর দফায়, দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত তিন শতাধিক আহত হন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের একপর্যায়ে রোববার দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রক্টরিয়াল বডি, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইনের দেওয়া একটি বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, নাজমুল হোসাইন তার বক্তব্যের একপর্যায়ে উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- ‘অস্ত্রাগার লুটের বিষয়টি একটু বলি। পাঁচ আগস্টের (২০২৪) পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমরা ১৬০ পিস রামদা কালেক্ট করেছি। এখানে আমি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য হিসেবে অ্যাকটিভলি কাজ করেছি।’
‘এই অস্ত্রাগারটি লুট করার জন্য ৬টি তালা ভাঙ্গা হয়েছে। এসময় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। উনারা ছাত্রদের পায়ে পড়েছেন। প্রোভিসি-এডমিন স্যার অনুরোধ করেছেন- তোমরা প্লিজ এটা করবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটা ভালো দেখাবে না। স্যার অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। ১৩০ পিস রামদা আমাদের অস্ত্রাগার থেকে লুট হয়েছে। আমি সকল ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতা চাই। সেটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যই হয়তো কোনোসময় বুমেরাং হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’
এ অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে জব্দ করা দেশীয় অস্ত্র নিরাপত্তা দফতরে সংরক্ষিত ছিল, যা গত ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা দফতর থেকে চুরি হয়।
চুরি করা দেশীয় অস্ত্রগুলো যাদের কাছে আছে, তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চবি’র নিরাপত্তা দফতরে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়ে প্রক্টর জানিয়েছেন, অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের একপর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী নিরাপত্তা দফতর থেকে ছয়টি তালা ভেঙে ১৩০ টি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যায়। প্রো-ভিসি স্যার অনুরোধ করলেও তারা শোনেনি। এই অস্ত্রগুলো গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবাসিক হলগুলোতে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয়েছিল। সেগুলো এখনও ফেরত পাওয়া যায়নি। অস্ত্রগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে চবি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, অস্ত্র লুটের ঘটনায় চবির নিরাপত্তা দফতরের প্রধান আব্দুর রহিম হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
তবে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন।