Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ


৭ জুলাই ২০১৮ ০৮:২০ | আপডেট: ৭ জুলাই ২০১৮ ০৮:৪৬

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: শহর জুড়েই জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। সাধারণ ভাইরাস জ্বর ছাড়াও এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীও পাওয়া যাচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। গত কয়েকবছরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়াতে চলতি বছরেও চলছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ভয়ের কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিলে ডেঙ্গু থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়। কিছু শারীরিক জটিলতা কাটতে সময় লাগলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোও দূর হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

তবে আশার কথা গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুণিয়া নিয়ে জনমনে আতঙ্ক থাকায় এবার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে কম। তারপরও যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়াতে তারা সুস্থ আছেন। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া-দুই জ্বরের বাহক-ই এডিস মশা। চিকিৎসকরা বলছেন, এ দুই জ্বরের লক্ষণে যেমন নানা মিল রয়েছে তেমনি অমিলও কম না। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কাউকে কামড়ালে চার থেকে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। আবার আক্রান্ত রোগী কোনো জীবাণুবিহীন মশা কামড়ালে সে জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবেই ডেঙ্গু জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, গতবছর চিকুনগুনিয়া নিয়ে অপ্রস্তুত থাকলেও চলতি বছরে সেজন্য আগেই এডিস মশার লার্ভা নিধনের কর্মসূচি নিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত চার রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যাদের বয়স ছিল ২৬ থেকে ৩৬ এর মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ ৪ জুলাই পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, বারডেম, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাসহ অন্যান্য হাসপাতালে ৪০৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন চার জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ৬৮ জন রোগী এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩৫ জন রোগী। অপরদিকে, ঢাকা বিভাগের বাইরে চট্টগ্রামে পাওয়া গিয়েছে দুইজন রোগী।

আবার অ্যাপোলো হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনাসহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩১৭ জন। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বাকি ২৫৪ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৬০ জন রোগী। সাধারণত মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর-এই পাঁচ মাস ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা গিয়েছে বিগত বছরগুলোতে।
চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩ টি ওয়ার্ডের ১০০টি জায়গায় জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪১টি জায়গায় জরিপ হয়। জরিপে এই ১০০ এলাকার ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলা হয়, ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকাতে যে মশার উপদ্রব রয়েছে সেটা ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার বাহক নয়, তাই এ দুই জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, জুন মাসে আড়াইশোর মতো রোগী ছিল সারাদেশে।

তবে গত বছরে যেরকম হারে রোগী আমরা পেয়েছি সে তুলনায় রোগীর সংখ্যা এবারে অনেক কম। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে প্রচার প্রচারণা খুব ভালো হওয়ার কারণে এখন আগের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি সতর্ক হয়েছে। যার ফলে এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম। আমাদের আয়ত্বের ভেতরেই রয়েছে পুরো বিষয়টি। আমরা মানুষকে বরং আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে অনুরোধ করছি।

ডেঙ্গু রোধে হাসপাতালগুলোতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. আয়েশা খাতুন বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের জন্য ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুইশ চিকিৎসককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গুরোধে আসলে জনসচেতনতা দরকার উল্লেখ করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট ( আইইডিসিআর) এর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিজের বাড়ি-ঘর অন্য কেউ পরিষ্কার করে দেবে না, নিজেকেই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
‘অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এবং দিনের যে কোনও সময়ে বৃষ্টি হওয়াতে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়, যাতে করে ডেঙ্গুর ‘প্রবালিটি’ বেড়ে গিয়েছে। তাই সচেতন থাকতে হবে-যেন এডিস মশা কোনোভাবে বাড়ি-ঘরে জন্ম নিতে না পারে’ বলেন এ এস এম আলমগীর।

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর