ঢাকা: আর্থিক সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণে প্রস্তাবিত ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠনের পক্ষে সম্মতি জানিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-এর সঙ্গে বৈঠকে এ সমর্থনের কথা জানান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর ড. কবির আহমেদসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ‘ব্রিজ ব্যাংক’ হলো একটি অস্থায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেটি এক বা একাধিক ব্যর্থ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর সঙ্গে আমাদের দ্বিমত নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।
তিনি জানান, তিনটি পৃথক অডিট নিশ্চিত করেছে যে, এস আলম গ্রুপ বেনামি ঋণের মাধ্যমে ৩৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। নিজেদের নামে ঋণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় তারা বেনামি পথে অর্থ নিয়েছে। এই ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির অপারেটিং ইনকাম ঋণাত্মক ৪ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, আর বেতন-ভাতা ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ কর্মীদের বেতন আমানতকারীদের টাকা থেকে দেওয়া হয়েছে। নথি অনুযায়ী, গত বছর ব্যাংকটির নেট লোকসান দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং মোট অপারেটিং ব্যয় হয় ১ হাজার ৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্গাপনা অনুযায়ী, আগামী অক্টোবর নাগাদ একীভূত হবে আর্থিক সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এ পাঁচ ব্যাংকের সমস্বয়ে গঠিত হবে বড় আকারের একটি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। এ উদ্যোগটি মূলত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর অধীনে ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার অংশ। এই অধ্যাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধানে বর্ধিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকটি ছিল পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিতব্য পূর্বনির্ধারিত আলোচনার অংশ। এর আগে এর আগে রোববার এক্সিম ব্যাংক এবং সোমবার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গভর্নরের অসুস্থতার কারণে তা হয়নি। বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ইউনিয়ন ব্যাংক এবং বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের নতুন তারিখ পরে জানাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।