ঢাকা: ন্যায্য দাবিতে নীলফামারীতে শ্রমিক আন্দোলেন পুলিশের গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত ও শতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিল্স)।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষে এ দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, গতকাল ২ সেপ্টেম্বর নীলফামারী জেলার উত্তরা ইপিজেডে এভারগ্রীণ প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরী বিডি লিমিটেড নামে একটি পরচুলা কারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাইসহ বিভিন্ন কারণে কয়েকদিন ধরে চলমান শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানার শ্রমিক হাবিবুর রহমান নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় বিল্স ও শ্রম সংস্কার কমিশন- ২০২৪ এর প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি অবিলম্বে আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, নিহত শ্রমিক পরিবার ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এই ঘটনায় কোনো শ্রমিক যেন চাকুরিচ্যুত না হয় বা কোনো হয়রানি না করা হয় এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় যেন ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও নীলফামারী জেলা প্রশাসনের নিকট তিনি জোর দাবি জানান।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায়শই শ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। আবার, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই কারখানা কর্তৃপক্ষ বেআইনী প্রক্রিয়ায় কারখানা বন্ধ করে দেন। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণে দ্রুততার সঙ্গে সরকার ও নিয়োগকারী পক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করার কারণে শেষপর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলনে যাচ্ছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন যা একেবারেই কাম্য নয়। এতে একদিকে শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে, অপরদিকে শিল্পে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণ সরাসরি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন; এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য বিভাগকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে একই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার দায়িত্বশীল আচরণ দাবি করছে এ ফোরাম।
ফোরাম মনে করে, কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনায় অধিকারবঞ্চিত ইপিজেড শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আলোচনার মাধ্যমে পূরণ করা যেতো এবং সেরকম অবকাশ থাকার পরও সেখানে আক্রমণ চালানো হয়। এতে হাবিবুল ইসলাম (২০) নামে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং প্রায় ২৪ জন শ্রমিক শারীরিকভাবে আহত হয় বলে স্থানীয় শ্রমিক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম হতে জানা যায়।
ফোরাম এ ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত শেষে দোষীদের বিচারের পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা এবং নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।
শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম মনে করে, শ্রমিকদের পাওনা বাকি রেখে কারখানা বন্ধের যে অনৈতিক ও বেআইনী রেওয়াজ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গড়ে উঠেছে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দায় রয়েছে সরকারের। এরূপ ঘটনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। উত্তরা ইপিজেডেও এভারগ্রিণ নামের একটা কারখানা মজুরি বকেয়া রেখে বন্ধ করে দেওয়ার জের ধরে উল্লিখিত শ্রমিক অসন্তোষের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।
বকেয়া মজুরি বাকি রেখে কারখানা বন্ধের বিরুদ্ধে সরকারের তাৎক্ষণিক, দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এরূপ বেআইনী কর্মকাণ্ড নিরসনে বিকল্প কোনো উপায় নেই। সে আলোকে শ্রম আইনেও এরকম অন্যায় প্রতিরোধে বাংলাদেশ শ্রম আইনে প্রয়োজনীয় বিধান যুক্ত করা প্রয়োজন।