Wednesday 03 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু নির্বাচন
ব্যতিক্রমী প্রচার নিয়ে আলোচনায় নবাব!

ঢাবি করেস্পন্ডেন্ট
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:৪৩

সামশুদ্দৌজা নবাব, সদস্য পদপ্রার্থী, ডাকসু নির্বাচন-২০২৫। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সামশুদ্দৌজা নবাব। আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার ব্যালট নাম্বার ১৬২। তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তবে, নির্বাচনকালীন সাংবাদিকতা থেকে সাময়িক অবসরে রয়েছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী ডাকসুতে আলোচনায় উঠে এসেছেন মূলত তার ব্যতিক্রমী প্রচারের কারণে। নবাব প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে পপ কালচারের মাধ্যমে তার নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তৈরি করেছেন স্পাইডারম্যান মাল্টিভার্স-স্টাইল প্রোমো ভিডিও, বানিয়েছেন ব্রেকিং ব্যাড-স্টাইল লিফলেট। স্পাইডারম্যান বেশ কয়েকটি প্রজন্মের মনে দাগ কাটা একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং ব্রেকিং ব্যাড একটি বিখ্যাত টিভি সিরিজ। ফলে মুহূর্তেই শুধু সহপাঠীদের মাঝে নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোচনায় উঠে এসেছেন এই ক্যাম্পাস রিপোর্টার।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি প্রচারে কেন পপ কালচার বেছে নিলেন?এমন প্রশ্নের জবাবের নবাব সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, পপ কালচারনির্ভর একটি প্রোমো ভিডিও বা লিফলেট বানালে, যে শিক্ষার্থী আমাকে এখনো চেনেন না, কিন্তু স্পাইডারম্যান অথবা ব্রেকিং ব্যাড’র ভক্ত, আমার সঙ্গে একটা কমন ইন্টারেস্টের জায়গা খুঁজে পাবে, আমার প্রতি তার একটা আগ্রহ তৈরি হবে।’

নবাব ছোটবেলায় বেড়ে উঠেছেন গ্রামে, যেখানে সিনেমা বা কমিকসের সহজলভ্যতা ছিল না। তবে সাইন্স ফিকশন বইয়ের প্রতি ছিল তার প্রবল টান। ধীরে ধীরে টিভি সিরিজের জগতে প্রবেশ করলে সেগুলোর প্রতি তৈরি হয় গভীর আগ্রহ। বিশেষ করে করোনাকালীন লকডাউনের অবসর তাকে ঠেলে দেয় টিভি সিরিজের সোনালি দুনিয়ায়। সেই আগ্রহই আজ তার প্রচারের হাতিয়ার।

তার দাবি, শুধু জনপ্রিয়তা নয়, প্রতিটি কনটেন্টের ভেতর তিনি লুকিয়ে রেখেছেন বার্তা। স্পাইডারম্যান ভিডিওর অনুপ্রেরণা এসেছে বিখ্যাত উক্তি থেকে- ‘With great power comes great responsibility. তার ব্যাখ্যায়, ‘আমি যদি জয়ী হই, তাহলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার একটা ক্ষমতা আসবে। সেই ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করাটাই আমার কাছে দায়িত্ব।’

অন্যদিকে ব্রেকিং ব্যাড-স্টাইল লিফলেটের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সময়ের মূল্য আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুত্ব। ওয়াল্টার হোয়াইট চরিত্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘কেউ তাকে হিরো ভাবে, কেউ ভিলেন। ব্যাখ্যা নির্ভর করে দর্শকের চোখে। আমার ইশতেহার বা ইমেজও কেউ যেমনভাবে ব্যাখ্যা করতে চাইবে, করতে পারবে। তবে আসল বার্তা হলো— সময় থাকতে তার সদ্ব্যবহার করা।’

নবাবের মতে, এবারের নির্বাচনে অনেকেই ভিন্নধর্মী প্রচার নিয়ে মাঠে। কেউ ডলারের আদলে লিফলেট বানিয়েছেন, কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বানিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো তার কাছে বোরিং লেগেছে। তাই তিনি চেয়েছেন এমন কনটেন্ট বানাতে, যা দর্শক আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করবে।

তার ভাষায়, ব্রেকিং ব্যাড-স্টাইল লিফলেট আসলে ‘ফেলে দেওয়ার মতো লিফলেট নয়।’ কারণ সেটি দেখতে মুভি পোস্টারের মতো, যা শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম। তিনি যুক্তি দেন, এবারের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটার জেন জি প্রজন্মের। তাই, মুভি বা সিরিজভিত্তিক প্রচারের সঙ্গে তাদের সংযোগ সহজ।

সাংবাদিক হয়ে নির্বাচন করছেন, আপনি কী করতে চান?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, একজন সাংবাদিকের ডাকসু কমিটিতে থাকা দরকার। এতে করে যে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন আমি তাদের আরও বেশি প্রশ্ন করতে পারব। এতে ডাকসুর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।’

নবাবের দাবি, এরই মধ্যে তিনি সাংবাদিকতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন। আরও বড় পরিসরে সেই কাজগুলো করতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডাকসুতে কী চলে তা শিক্ষার্থীদের জানাতে চাই। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডাকসু কমিটিকে প্রশ্ন করতে চাই, যে রাজনৈতিক প্যানেল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই ক্ষমতায় আসুক না কেন।’

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়েও আশাবাদী তিনি। তার দাবি, এখন পর্যন্ত সহপাঠীরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন, মনোযোগ দিয়ে লিফলেট পড়েছেন, ভিডিও দেখেছেন, এমনকি কেউ কেউ মৌখিকভাবে ভোট দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় এখনো পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে নবাব বলেন, ‘এখনো তেমন কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে আমার বিভাগের এক শিক্ষক আমার প্রশংসা করেছেন।’

নবাবের বিশ্বাস, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কনটেন্ট অফলাইনে পরিচিতি তৈরি করছে। সরাসরি প্রচারে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে চিনেছেন, বলেছেন ভিডিও বা লিফলেট দেখেছেন আগেই। এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তার মাঠে এনে দিচ্ছে বাড়তি সুবিধা।

পপ কালচার ও রাজনীতিকে আলাদা কিছু মনে করেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালে এসে এই প্রশ্নটাই অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, পপ কালচার এখন শুধু বিনোদন নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। ছাত্র রাজনীতিতে আমি এটাকে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছি।’

এ নিয়ে কোনো ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হননি নবাব। বরং, শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে এসে তার লিফলেট চেয়েছেন, প্রশ্ন করেছেন, আর তিনি উত্তর দিয়েছেন। এতে ভোটারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বেড়েছে, যা তার জয়ের সম্ভাবনা বাড়াবে।

তবে নির্বাচনে হেরে গেলেও হতাশ হবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই ক্যাম্পাস রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি। ভবিষ্যতেও করব, জিতলে শুধু পরিসর বাড়বে। আমি চাই ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে। জয়ী হলে বাস্তববাদী হিসেবেই কাজ করব। আর হারলেও আমার কোনো দুঃখ থাকবে না। কারণ, আমি অন্তত হাজার খানেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি।’

সারাবাংলা/কেকে/পিটিএম

ডাকসু ব্যতিক্রমী প্রচার সামশুদ্দৌজা নবাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর