ঢাকা: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একীভূতকরণ উদ্যোগে সম্মতি জানিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক। তবে এক্সিম ব্যাংক এখনই এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। একীভূত প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়ার আগে নিজস্ব পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং এজন্য কিছুটা সময় চেয়েছে ব্যাংকটি।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক বৈঠক শেষে ব্যাংক দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব কথা জানান। উভয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর ও রেজল্যুশন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
ইউনিয়ন ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ূন কবির উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ফরিদ উদ্দীন বলেন, আমানতকারীরা টাকা নিতে আসছেন। আমরা দিতে পারছি না। এ ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এস আলম। যাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে সমস্যা হচ্ছে। এজন্য যত দ্রুত এসব ব্যাংক নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে, ততই ভালো। এক্ষেত্রে এসব ব্যাংক একীভূত, পুনর্গঠন বা অন্য কিছু হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পরে বৈঠকটি হয় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। বৈঠকে ব্যাংকটি তাদের প্রস্তুত করা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার একটি খসড়া উপস্থাপন করে। তবে প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি আরও সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত উপস্থাপন করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠক শেষে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমরা একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আরও স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে তা উপস্থাপন করতে বলেছে। আমরা এটি সংশোধন করে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করব।
এর আগে গত মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠনের পক্ষে সম্মতি জানিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
বৈঠক শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর সঙ্গে আমাদের দ্বিমত নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।
তিনি জানান, তিনটি পৃথক অডিট নিশ্চিত করেছে যে, এস আলম গ্রুপ বেনামি ঋণের মাধ্যমে ৩৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। নিজেদের নামে ঋণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় তারা বেনামি পথে অর্থ নিয়েছে। এই ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটি মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
উল্লেখ্য, আর্থিক সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক ৫টি দুর্বল ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সারা সপ্তাহব্যাপী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী অক্টোবর নাগাদ একীভূত হবে আর্থিক সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক ৫ ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এ পাঁচ ব্যাংকের সমস্বয়ে গঠিত হবে বড় আকারের একটি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। এ উদ্যোগটি মূলত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর অধীনে ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার অংশ। এই অধ্যাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধানে বর্ধিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।