Thursday 04 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আরপিও সংশোধন
নতুন প্রস্তাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর

নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:৫২

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ২০২৬ সালের রোজার আগেই ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু নতুন বিধান যুক্ত করে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এই প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেলেই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হবে। তবে এরই মধ্যে আরপিও প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

আরপিও সংশোধনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, জামানত আড়াইগুণ বাড়ানো, ভোটার অনুপাতে নির্বাচনি ব্যয় আসনভিত্তিক ২৫ লাখের বেশি করার সুযোগ, অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ না রাখা এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট চালু। এছাড়াও রয়েছে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত করা, সমভোট পেলে পুননির্বাচন, জোটে ভোট করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করা, জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনিয়ম করলে রিটার্নিং অফিসারের পুরো আসনে ভোট বাতিলের ক্ষমতা, অনলাইনে নয় মনোনয়নপত্র সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা, প্রার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য হতে পারবে না, হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রমাণ পেলে ভোটের পরেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা ইসির হাতে রাখা, প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বাড়ানোসহ ছোট-বড় ৪০-৪৪টি সংশোধনী। এমনকি এআই-অপব্যবহার রোধে আচরণবিধিতে শাস্তির বিধান যুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া, প্রবাসী ও দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটিংয়ের বিষয়েও আরপিওতে সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। বিশেষ করে ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণার বিধান, জামানত ও নির্বাচনি ব্যয় বাড়ানো এবং একক প্রার্থিতায় ‘না’ ভোট নিয়ে আরও আলোচনার পরামর্শ এসেছে।

আরপিওতে নির্বাচনে জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে জামানত রয়েছে ২০ হাজার টাকা, সেটাও অনেক বেশি। বরং, যার যত আয় সেই প্রার্থীর জন্য একটা পার্সেন্টেজ ধরে দেওয়া যেতে পারে। আয় অনুযায়ী জামানত নির্ধারণ হলে ন্যূনতম সমতা আসতে পারে।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক জানান, জামানত বাড়ালে টাকাওয়ালা ছাড়া নির্বাচন করতে পারবে না। নতুন এই প্রস্তাবে ঘোর বিরোধিতা করেন তিনি। সেইসঙ্গে জানান, অনলাইনেও মনোনয়নপত্র জমার বিধান থাকা দরকার। রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘ফেরারি আসামি কে হবে, না হবে তা আইনগত বিষয়। বিষয়টি আইনের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন না- এখন আইনে এমনটাই আছে। এটাই রাখা উচিত। আমাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কারও গণতান্ত্রিক অধিকার যাতে খর্ব না করি- সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত।’ সেইসঙ্গে ‘না’ ভোট সব আসনে থাকা জরুরি বলেও জানান রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, “কেবলমাত্র একক প্রার্থীর আসনে নয়, ৩০০ আসনেই ‘না’ ভোট থাকতে হবে।”

তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত জানালেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যারা ফেরারি আসামি, যারা অপরাধী, তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বিশেষ করে ডামি বা স্বতন্ত্র কোনো নামেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। যাদের নাম মামলা আছে তারাও পারবে না। এমনকি যাদের নাম মামলা নেই তারাও পারবে না। এটাই আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য। নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে, শুধু ফেরারি আসামি নয়, দোসর বা ফ্যাসিবাদীরা কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জামানত যা ছিল তা থেকে আরও বাড়ানো হয়েছে। এটা আরও কমানো উচিত। ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এটা অনেক বেশি। যেহেতু সংস্কার হচ্ছে, এটা আরও কমানো দরকার।’ একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের বিধান রাখা পজিটিভভাবেই দেখছেন তিনি। তবে অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পক্ষে নন তিনি। আর এ ক্ষেত্রে ইসির নতুন সংশোধন প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানান তিনি।

ইসির সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাই এখনই কিছু বলা সমীচীন হবে।’ তবে বৈঠকের পর মন্তব্য করা যাবে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম

আরপিও সংশোধন নতুন প্রস্তাব মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক দল

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবককে গুলি করে হত্যা
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর