দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকা পাচার, স্ত্রীসহ সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা: দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা করেছে সিআইডি।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দুবাইয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডি। পাচারকৃত উক্ত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপনা এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিচালনার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।’

জসীম উদ্দিন বলেন, ‘অনুসন্ধানকালীন প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৬ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের Al Barsha South 3rd, Barsha South, Barsha South 4, Thaniya 5th, Jaddaf, Haiba 6th, Gulf Commercial, Khairan, Yalayes 2, Burj Khalifa, Jabal Ali, World Island, Zabeel 2nd, Marsa Dubai, Me’aisem The First, Nad Al Sheba First, Wadi Al Safa-3 সহ বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। যার মূল্য ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম। এ ছাড়াও তার স্ত্রী রুকমীলা জামান (৪৬) এর নামে দুবাই এর Al Barsha South 3rd এলাকায় “Q Gardens Boutique Residences-Block B” নামে ২টি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়, যার মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম।’

তিনি বলেন, ‘সাইফুজ্জামান চৌধুরী এর নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকের ২টি হিসাবসহ মোট ৪টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়। ওই ব্যাংক হিসাবগুলোতে বিভিন্ন অংকের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় যা তৎকালীন সময়ের মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমীলা জামান এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পারস্পরিক যোগসাজসে সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) এর Ras AL Khaimah Economic Zone এর অনুমতিক্রমে বিল্ডিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশান ম্যাটারিয়াল প্রোডাক্ট ব্যবসার জন্য Zeba Trading FZE এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য Rapid Raptor FZE নামে ২টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিনিয়োগ এবং পরিচালনার তথ্য পাওয়া যায়। তিনি বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছে।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগটির অনুসন্ধান শেষে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমীলা জামানসহ অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৭ জন এর বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় সিআইডি বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং মামলা করেছে। অজ্ঞাত সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

উল্লেখ্য, সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ১২ জানুয়ারি ২০১৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ৩ বারের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।