Saturday 06 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আরপিও সংশোধন
নতুন প্রস্তাবের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে

নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৮

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ফাইল ছবি

ঢাকা: আসছে রোজার আগেই অর্থাৎ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু নতুন বিধান যুক্ত করে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এই প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেলেই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হবে।

আরপিও সংশোধনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, জামানত আড়াইগুণ বাড়ানো, ভোটার অনুপাতে নির্বাচনি ব্যয় আসনভিত্তিক ২৫ লাখের বেশি করার সুযোগ, অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ না রাখা এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট চালু। এছাড়াও রয়েছে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত করা, সমভোট পেলে পুননির্বাচন, জোটে ভোট করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করা, জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

তবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত বাড়ানো, অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান বাতিলসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আনা বেশকিছু নতুন প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য, ইসি যেখানে পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা এনে আধুনিক প্রযুক্তিমুখী হচ্ছে, সেখানে কেন অনলাইন মনোনয়নপত্র বাতিল করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে নির্বাচনে জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার কোনো যুক্তিই দেখেন না এই বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, আরপিওতে আনা এসব নতুন বিধান প্রয়োগ ও বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত বাড়ানো ঠিক হয়নি। জামানত বাড়ানো সব লেবেলের মানুষের জন্য প্রযোজ্য না।’ তিনি মনে করেন এত বেশি না বাড়ালেও চলতো। আর অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পদ্ধতি বাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সেখানে অনলাইনে মনোনয়ন জমা কেন কমিশন বাদ দিয়েছে- সেইটা জানি না। অনলাইনের বিধানটা থাকা প্রয়োজন ছিল।’ তিনি বলেন, ‘ধরুন কেউ যদি ঢাকায় থাকেন, কিন্তু পঞ্চগড়ে মনোনয়ন জমা দেবে। তাহলে কেন অনলাইনে নয়।’ সংশোধনী প্রস্তাবে ফেরারি আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না- এই নিয়মটি যুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, এই নিয়মটি স্থানীয় নির্বাচনে আগে ছিল, সেটা জাতীয় নির্বাচনে যোগ হলো।

সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার আরপিও সংস্কারের সার্বিক প্রস্তাব ইতিবাচক মনে করেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য করার বিধান যুক্ত করা যৌক্তিক। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, অনেক ধরনের অপরাধী রয়েছে; তাদেরকে ভোট থেকে দূরে রাখতে এ প্রস্তাব সময়োপযোগী।’ তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিক সংশোধন ইসির কর্তৃত্ব বাড়াবে।’ তবে এই ক্ষমতা বাড়লেই হবে না, তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জের মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সারাবাংলার এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ফেরারিদের ভোটে অযোগ্য করার প্রস্তাবটি আবারও পুনর্বিবেচনা করা উচিত। ফেরারি আসামি তো মামলার বাস্তবতা বুঝে হবে। বাস্তবতা নিরীক্ষণ করে এটা রিভিউ করার সুযোগ থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কেস ফলস হয়, পলিটিক্যাল কেস হয়। নানা ধরনের কেস হয়। কাজেই সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না- তার আগে দোষটা যদি প্রমাণিত হয় তখন হতে পারে। তিনি তো রিভিউ’র কথা বলতে পারে।’ মনোনয়ন জমা দানে বিশৃঙ্খলা এড়াতে অনলাইনে মনোনয়ন নেওয়ার বিধান রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সেইসঙ্গে জামানত বাড়ানোতে তিনি কোনো সমস্যা দেখছেন না বলেও জানান।

আর আরপিও নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত যদি মনে করে সে (ফেরারি) নির্বাচন করতে পারবে, তাহলে তো বাধা নেই। যেহেতু পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সেটা সত্য স্বীকার করে নিচ্ছে।’ তাই তিনি এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। তবে জামানতের টাকা বাড়ানোয় যোগ্য প্রার্থীদের ভোটে দাঁড়াতে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি। এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অনেক প্রার্থী রয়েছে সৎ ও যোগ্য। ইসির এ সিদ্ধান্ত তাদের ডিসকারেজ করতে পারে।’ ‘না’ ভোট শুধু একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।

এছাড়া, অনলাইনে মনোনয়ন জমার বিধান রাখার পক্ষে তিনি বলেন, ‘অনলাইন ফেরারি আসামির জন্য প্রযোজ্য হবে না- এমন সুপারিশ ছিল আমাদের। অন্যরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার পাশাপাশি যেন অনলাইনেও দেওয়ার সুযোগ পায়। অনলাইন দরকারি জিনিস। অনেক সময় মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধার মধ্যে পড়ে। অনলাইন থাকলে সেটা হবে না।’ এছাড়া, নির্বাচনে প্রার্থীর জামানত বাড়ানো গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানান এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।

সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম

আরপিও সংশোধন চ্যালেঞ্জিং নতুন প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন প্রয়োগ বাস্তবায়ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর