ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নতুন টেলিকম নীতিমালা অনুমোদনের পর হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম আইওএফ। একইসঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবায় এখনই প্রবেশাধিকার চেয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই সেবার জন্য তারা লাইসেন্স প্রাপ্ত হলেও নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে, শুরু থেকেই বিদেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। সংগঠনটির সংশ্লিষ্টরা এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছন।
আইওএফ এর প্রসিডেন্ট আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেন, ‘অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে এই নীতিমালা কেবিনেটে নিয়ে আসা হলো এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের আপত্তি উপেক্ষা করে অনুমোদনও করা হলো। নতুন নীতিমালার ফলে এখনো এই খাতে সামান্য যেটুকু ব্যবসা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে, সেটাও বিদেশিদের কাছে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ খাতে এমনিতেই বিদেশি এমএনও (মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর) গুলোর নিরঙ্কুশ দাপট। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে কার্যত তাদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায়সঙ্গত ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বিনষ্ট হবে। এতোদিন ধরে গড়ে উঠা দেশি কোম্পানিগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, ‘যেসব ক্ষেত্রে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা এরইমধ্যে যথেষ্ট দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছে, সেসব ব্যবসা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে?’
আসিফ সিরাজ বলেন, ‘শুধু আইজিডাব্লিউ খাতেই আমাদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। অনেক দক্ষ প্রযুক্তিবিদ আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। এই নীতিমালা তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ পর্যন্ত আমরা বিটিআরসিকে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ নতুন নীতিমালা কিংবা বিধি বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে খুব একটা সমন্বয় করা হয় না। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য ও দুঃখজনক।’
আইওএফ প্রেসিডেন্ট জানান, আইজিডব্লিউ অপারেটররা আন্তর্জাতিক ভয়েস কলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এসএমএস ব্যবসায় প্রবেশাধিকার পাবেন ধরে নিয়েই ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এ ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন না পাওয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অপরদিকে, বৈধ পথে কলের পরিমাণ ১০ কোটি থেকে কমে এক কোটি ২০ লাখে নেমে আসায় আইজিডাব্লিউ’দের ব্যবসায়িক অস্তিত্ব বর্তমানে সংকটের মুখে। অনতিবিলম্বে আইজিডাব্লিউদের আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবা পরিচালনার অনুমতি দিলে এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায়িক অস্তিত্ব টিকে থাকবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় ২০০ কোটি টাকা বাড়বে।
বিভিন্ন বিদেশি অ্যাগ্রিগেটর ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গড়ে তিন কোটির বেশি আন্তর্জাতিক ইনকামিং এটুপি এসএমএস বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমান গড় বাজারদর এসএমএস প্রতি আট সেন্ট (ইউএসডি) হিসাবে মাসে আয় ২৪ লাখ ডলার। বর্তমানে, মোবাইল অপারেটরদের থেকে বিটিআরসি সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার ডলার আয় করতে পারে (৫.৫ শতাংশ হারে রাজস্ব ভাগাভাগি এবং অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে সামাজিক দায়িত্ব তহবিল )।
আসিফ সিরাজ রব্বানী’র দাবি, লাইসেন্সিং গাইডলাইন মেনে এই সেবাটি আইজিডব্লিউ এর মাধ্যমে পরিচালিত হলে বিটিআরসি কেবল আইজিডব্লিউ থেকেই নয় লাখ ৬০ হাজার ডলার (৪০ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগি) আয় করতে পারত। এ ছাড়াও, আইসিএক্স ও মোবাইল অপারেটরদের রাজস্ব ভাগাভাগি থেকে বিটিআরসি আরও দুই লাখ ৪৫ হাজার ডলার আয় করতে পারত। সব মিলিয়ে বিটিআরসির মাসিক আয় দাঁড়াত কমপক্ষে ১২ লাখ পাঁচ হাজার ডলার। অর্থাৎ বিটিআরসির বর্তমান আয় থেকে প্রায় আট গুণ বৃদ্ধি পেত।