Saturday 06 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৫ আগস্টের আগে থেকেই সিলেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:২৩ | আপডেট: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:২৯

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘সিলেটের পাথরমহাল এলাকাগুলো থেকে অনেক আগে থেকেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছিল। অথচ এখন ৫ আগস্ট-এর ঘটনার কাঁধে বন্দুক রেখে বলা হচ্ছে, এসব লুটপাট নাকি ৫ আগস্টের পর থেকে শুরু হয়েছে। বাস্তবে সিলেটের পাথরমহালগুলো থেকে আগেই নির্বিঘ্নে পাথর তোলা হচ্ছিল।’

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক নগর সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি জানান, “সিলেটের ছয়টি জায়গা থেকে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে আমি প্রথম মামলা করি ২০০৯ সালে। এর আগেই অন্তত দুই বছর ধরে অবৈধভাবে উত্তোলন চলছিল। দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই ও অ্যাডভোকেসির পর ২০২০ সালে জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। সরকার তখন উদ্যোগ নেওয়ায় বাকি ছয় জায়গাতেও কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন আবার নতুনভাবে লুটপাট শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে।”

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “এখন বলা হচ্ছে, মাত্র কয়েক দিনে ৩০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। অথচ ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৪০ কোটি টাকা। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, প্রকৃত মূল্য এবং রাজস্বের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য নেই। লুটেরা কারা, তাদের আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি।”

রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, দেশের মোট পাথরের চাহিদার মাত্র ৬ শতাংশ পূরণ হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, বাকিটা আমদানি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে এত গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পাথর এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা না যাওয়াকে তিনি ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরেন।

ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান না থাকায় হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের মতো দেশ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে পর্যটনের উন্নয়ন করছে। অথচ বাংলাদেশে জাফলংসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখনো সংরক্ষিত হয়নি।”

তিনি বলেন, “সর্বদলীয় ঐক্যের কথা আমি বলেছিলাম। পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া প্রশাসনিক সহায়তা পাওয়া যায় না। প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন জলাশয় উদ্ধারের ক্ষেত্রেও আমরা প্রশাসনের অনুপস্থিতি দেখেছি। জনগণ প্রতিবাদ না করলে সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যেত না।”

রিজওয়ানা হাসান স্পষ্ট করে বলেন, “পাথর বিষয়টি সরাসরি আমার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়। তারপরও আমি সিলেটের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “যেভাবে আমরা সাদা পাথর নিয়ে কথা বলি, ঠিক একইভাবে বাকখালী নদীর দূষণ নিয়েও আমাদের সরব হতে হবে। দশতলা ভবন ভাঙা ঠেকাতে যেভাবে মানুষ মাঠে নেমেছে, ঠিক একইভাবে নদী রক্ষায়ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাকখালী নদী উচ্ছেদের জন্য পাঁচ দিনের পরিকল্পনা থাকলেও, প্রচণ্ড বাধার মুখে মাত্র তিনদিন কার্যক্রম চালানো গেছে।”

চলনবিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চলনবিল রক্ষায় আদেশ জারি করে সীমানা নির্ধারণ করা হবে, যাতে ভরাট বন্ধ রাখা যায়। আড়িয়াল বিল, চলনবিল এবং বেলার বিল নিয়ে একসঙ্গে কাজ চলছে।

ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ঢাকার জেলা প্রশাসককে ৪০টি পুকুর উদ্ধারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খাল খননের উদ্যোগ নেওয়ার ফলে এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা কিছুটা কমেছে। তবে খালগুলো ড্রেজিংয়ের দুই মাসের মধ্যেই পুনরায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমিনবাজার বর্জ্য প্রকল্পকে একটি মডেল হিসেবে নিয়ে, বিদেশি কোনো সংস্থার মাধ্যমে এর উন্নত ব্যবস্থাপনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

হাওর অঞ্চলের বিষয়ে তিনি জানান, হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি করা হয়েছে। হাওরের ভেতরে হাউস বোট কীভাবে চলবে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আপাতত হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর সুরক্ষায় কাজ চলছে।

দেশের নদীগুলোর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের নদীর তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে সুন্দরবন ও পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলো এখনো শনাক্ত হয়নি। এজন্য নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ঝুঁকিপূর্ণ নদীগুলোর তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী নদীগুলোর তালিকাও প্রণয়ন করা হবে।

তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য, প্রশাসনিক সদিচ্ছা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তা না হলে কোনো কিছুই টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।”

সারাবাংলা/এফএন/এসএস

আগস্ট উত্তোলন পাথর সিলেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর