ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের লক্ষ্যে ধর্ম, লিঙ্গ ও জাতিগত বিভাজনের ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজকে প্রভাবিত করে। এজন্য আমাদের বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং বাস্তববাদী হতে হবে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্চবিশপ হাউসে ভ্যাটিকান প্রতিনিধিদলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আমাদের মূল বার্তা হলো-আপনার ধর্ম, লিঙ্গ, জাতি, ভাষা বা গায়ের রঙ-কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের সব বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের একসঙ্গে বসে এসব ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে-কেন এগুলো ঘটে, কোথা থেকে এগুলোর উৎপত্তি। তিনি বলেন, “আমরা যেন নিরুৎসাহিত না হই, হতাশ না হই।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান শেখায়। আমাদের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতিকে সমর্থন করে। পারস্পরিক সংলাপ ও সহাবস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
কার্ডিনাল জর্জ কোভাকাদ বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহ্যের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। এই ঐক্য মানব মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
তিনি পোপ ফ্রান্সিস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তার এনসাইক্লিক Fratelli Tutti আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এই বৈশ্বিক যুগে আমাদের চরম জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই মনোভাব শুধু নিজেদের স্বার্থকেই সহ্য করে এবং বাইরের সবকিছুকে হুমকি হিসেবে দেখে।”
কার্ডিনাল কোভাকাদ বলেন, “আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। এই সংলাপের ফলাফলই মানুষের মধ্যে গভীর ঐক্য আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাসের আলোকে বোঝাপড়ার জন্য সংলাপে অংশ নিই। এই বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার ঐশী সত্যের সন্ধান করি।
জানা গেছে, ভ্যাটিকান প্রতিনিধিদল আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করতে এক সপ্তাহের সফরে ঢাকায় এসেছে। তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, আন্তঃধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন, জাতীয় মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির এবং রাজধানীর ক্যাথলিক গির্জা পরিদর্শন করবেন।