ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিতে এক ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা বিরাজ করছে। ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয় না, পড়ে থাকে মাসের পর মাস। অন্যদিকে মামলার বিরুদ্ধে রিট আবেদনের ক্ষেত্রে খেলাপিদের কোনো অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হয় না। ফলে কারণে-অকারণে রিটের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সমন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং বন্ধকী সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পুলিশি সহযোগিতাও পাওয়া যায় না।
সম্প্রতি (০৪ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আয়োজিত এক সভায় এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর সচিব নাজমা মোবারেক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে জানানো হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিপরীতে মোট অর্থের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০টি মামলায় ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা; অগ্রণী ব্যাংকের ১০ মামলায় ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা; রূপালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা; বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১০ মামলায় ৮৭৬ কোটি টাকা; বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২৯৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা রয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশন এর ৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর ৮৬০ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর ৮৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা আছে।
বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক, মামলাগুলো কোনটি কোন কারণে আটকে আছে, তা চিহ্নিত-পূর্বক সমস্যার সমাধান করে দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সহযোগিতা চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটনি জেনারেল কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বৈঠক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর সচিব নাজমা মোবারেক সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রণালয় বোঝার চেষ্টা করছে- কেন মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না? এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কী করতে হবে?
তিনি বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে না, মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। মামলায় গতি আনতে বাদী হিসাবে সরকারের আইনানুগ এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করা হবে।
নাজমা মোবারেক বলেন, অন্যদিকে খেলাপিদের রিট করতে কোনো অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হয় না। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিয়ে রিটের বিধান রাখা গেলে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রবণতা কমে আসবে এবং ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অগ্রিম কিছু অর্থ আদায়ও হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আরও চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১) প্রতিটি ব্যাংক এসব মামলার অগ্রগতি, মামলা আটকে থাকার কারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে একজন করে কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক নিযুক্ত রাখা;
২) প্রতিটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে প্রতি মাসে বৈঠক করবেন এবং বৈঠকের ফলাফল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করবেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে;
৩) অনেক সময় আদালত থেকে খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে সমন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তা বাস্তবায়ন করে না বলে সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ;
৪) এছাড়া অনেক সময় আদালত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিলেও বন্ধকী সম্পত্তি প্রভাবশালী দখলদারদের দখলে থাকে। তাদের উচ্ছেদ করে ব্যাংক তা দখল করতে গেলে পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়েও সহযোগিতা চাওয়া হবে।
এছাড়া জেলা প্রশাসকরা যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠকে নিম্ন আদালতে চলমান শীর্ষ ঋণখেলাপি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিতে উৎসাহী হন, সেজন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তাদের সহযোগিতা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।