রংপুর: রংপুরে বিস্ফোরক মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ছাত্রলীগ নেতা আবু সালেহ মোহাম্মদ নাহিদ ওরফে ক্যাডার নাহিদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা একটি মামলায় রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টায় নগরীর খামার মোড় থেকে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করে তাজহাট থানা পুলিশ।
রংপুর মহানগর তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাজাহান আলী সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক এবং পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই নেতা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার পান্থাপাড়া এলাকার আবু তালেবের ছেলে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে ভর্তির পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে নাহিদ। ক্যাম্পাসে ‘ক্যাডার নাহিদ’ নামে পরিচিত। বিভিন্ন হলে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনৈতিক সুবিধা আদায় করার মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সহযোগিতায় অনার্সের গণ্ডি পেরিয়েছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষককে সরকারবিরোধী ট্যাগ দিয়ে অ্যাকাডেমিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে সিনিয়র-জুনিয়র কোন তোয়াক্কা করতো না নাহিদ; মারধর করাই ছিলো নেশার মতো। মাদক সেবন ও মাদক বিক্রির রমরমা ব্যবসা জড়িত ছিলো। শিক্ষার্থীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। ছাত্রলীগের নেতাদের দিয়ে এমন কোনো অপরাধ নেই যে করেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুম খুন করার হুমকি-ধামকি শুধু নয় হাতে রামদা নিয়ে মারধরের ছবিও ভাইরাল হয়েছিল সেসময়।
এর আগে চলতি বছরের ৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আইনে রংপুর মহানগর তাজহাট থানায় মামলা করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ১১৪, ৩৪ ধারা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩-ক ধারার উল্লেখ করেন। মামলায় ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক, ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়। যার মধ্যে আবু সালেহ মোহাম্মদ নাহিদের নাম উল্লেখ ছিল।
মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার সময় আরও অনেকেই জড়িত ছিলেন। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাজান আলী জানান, ‘বেরোবি ছাত্রলীগ নেতা নাহিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সেই মামলায় এজাহার নামীয় ৩৫ নম্বর আসামি তিনি। তিনি বলেন, মামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে আদালতে তোলা হবে।’