ঢাকা: আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রথমবারের মতো ‘পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা’ চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু প্রবাসীরাই নয়, ভোটের সময় যারা কাজের প্রয়োজনে নিজ এলাকার বাইরে থাকবেন, তাদের জন্যও পোস্টাল ভোটের বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এই কর্মযজ্ঞ আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে চায় সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
যাদের জন্য পোস্টাল ভোট
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনি কাজে যুক্ত কর্মকর্তা (যারা নিজ ভোটার এলাকায় থাকতে পারবেন না), গণমাধ্যমে কর্মরত কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত সদস্যরা পোস্টাল ভোটের আওতায় পড়বেন। এছাড়াও, যারা কারাগারে আছেন তারাও পোস্টাল ভোট দিতে পারবেন।
ইসির যত কর্মযজ্ঞ
মোবাইল অ্যাপ তৈরি ও পরীক্ষামূলক (আউট অবকান্ট্রি ভোটিং- ওসিভি ও ইনকান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং- আইসিপিভি নিবন্ধন ও ট্রাকিং মডিউল) প্রতীক ও প্রার্থীদের সংযুক্ত করে চালাতে হবে ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যে। মোবাইল অ্যাপের ট্রায়াল, নিরীক্ষা, ত্রুটি সংশোধন ও ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রস্তুতি ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের পর্যন্ত। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওসিভি ও আইসিপিভি’র জন্য প্রচার, উদ্বুদ্ধকরণ ও ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এছাড়া, ব্যালট পেপার, নির্দেশিকা ও ঘোষণাপত্র মুদ্রণের তারিখ ১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরে মধ্যে। ওসিভি ও আইসিপিভি’র জন্য তালিকাভূক্তি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু ১১ নভেম্বর, যা চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ডাকবিভাগ খামের কাস্টমাইজেশন করবে ১৫ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি। ভোটারদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে ২০ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ভোটার তালিকা মুদ্রণ হবে ১ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর।
আর তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হলে ভোট দিতে পারবে ওসিভি ও আইসিপিভির আওতায় ভোটারা। ভোট প্রদান ও ব্যালট পেপার বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে। এর পর কমিশন প্রতিটি ব্যালট পেপার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে ফলাফল একীভূত হওয়ার আগে।
প্রকল্প ব্যয়
পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার হাতে নিয়েছে ইসি। যদিও বিশাল প্রবাসী জনগোষ্ঠীর পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়া ও মুদ্রণসহ প্রাসঙ্গিক ব্যয় নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, অন্তত ৪০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে। কেননা কতজন প্রবাসীর সাড়া পাওয়া যাবে আর ভোটারদের ব্যালট আনা-নেওয়ায় ডাক বিভাগ শেষ পর্যন্ত কত খরচের প্রস্তাব রাখছে- সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে ইসি।
জানা গেছে, এরই মধ্যে এ প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় একজন টিম লিডারের জন্য বেতন ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই টিম লিডারের কাজের মেয়াদ ২৩ মাস। আর প্রকল্পের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং খাতে একজন পরামর্শকের জন্য বেতন ধরা হয়েছে ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এগুলোসহ অন্যান্য খাতে পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নতুন প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। তবে সব মিলিয়ে পোস্টাল ব্যালটে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। আর প্রকল্পটি আগস্ট ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে ইসি।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অনলাইন নিবন্ধনে অ্যাপ তৈরিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে এতে। আর প্রবাসীদের ভোটিংয়ের ব্যালট আনা-নেওয়া ও মুদ্রণসহ অন্যান্য বিষয়ে মাত্র আলোচনা শুরু হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পোস্টাল ভোটিং প্রকল্পটি কনসালটেন্স সার্ভিস ওরিয়েন্টেড। এটি মূলত ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাবিলিটি রিলেটেড। তাই পরামর্শক খাতে এই ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।’
বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ ভোটারের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু হচ্ছে জানিয়ে পোস্টাল ভোটিংসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও পরামর্শক সালিম আহমাদ খান সারাবাংলাকে জানান, আউট অব কান্ট্রি ভোটিং-ওসিভি নিয়ে কাজ চলছে; মডিউল নিয়ে প্রচারণায় যাবে। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের বিস্তারিত জানানো যাবে।’
এদিকে বাজেট শাখা সূত্র জানায়, একটি পোস্টাল আনা-নেওয়া করতে ব্যালটপ্রতি সরকারিভাবে ব্যয় হবে ৫০০ টাকার মতো। আর বেসরকারিভাবে এটি দাঁড়াবে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ইসির নতুন এই প্রকল্পটিকে নিরাপদ, ব্যবহারবান্ধব, সংশয়কালীন সম্প্রসারণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচনি মানদণ্ডের হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার শুরু থেকেই সংস্কার কমিশনের তালিকায় ছিল। আমরা অত্যন্ত খুশি যে, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। আর বাকিটা যেভাবে পরিকল্পনা করেছে, সে হিসেবে এগিয়ে গেলে এবারের নির্বাচন হবে ঐতিহাসিক। কারণ, প্রবাসীদের ভোটে যুক্ত করা গেলে ভোটের হার যেমন বাড়বে, তারাও ভোটাধিকার ফিরে পাবে। এতে নির্বাচন হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক।’