ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ডাকসুর সর্বোচ্চ তিন পদ সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নিয়ে। তবে এই শীর্ষ তিন পদে কোনো একক প্যানেলকে এগিয়ে রাখছেন না শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট দলীয় মতাদর্শের বাইরে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই চাওয়া, ডাকসুতে সবদলের প্রতিনিধি থাকুক। এরকমটি হলে, তা হবে বিগত দুই ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের ব্যতিক্রম।
১৯৯০ সালের নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয় পেয়েছিল ছাত্রদল। ওই সময় ছাত্রদল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন আমান উল্লাহ আমান। আর জিএস নির্বাচিত হন খায়রুল কবীর খোকন। এছাড়া, এজিএস পদে জয়ী হন নাজিমউদ্দিন আলম। ১৯৯০ সালের ৬ জুন নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময়ে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর নির্বাচন হয়নি। তবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনেও দু’টি পদ বাদে বাকি সবগুলোতেই জয় পায় ছাত্রলীগ। ভিপি পদে নির্বাচিত হন ছাত্রঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই দলের আখতার হোসেন। জিএস পদে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও এজিএস পদে দলটির তৎকালীন ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ দু’টি বাদে সব পদেই জয়লাভ করে। তবে ছয় বছর পর ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে কোনো একক প্যানেলের আধিপত্য দেখছেন না ভোটাররা।
ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এবার কে জয়ী হবেন? এবারে নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন একঝাঁক তরুণ ছাত্র নেতা। এ পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের প্রার্থীদের দিকে। ডাকসুতে জিএস পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে তানভীর বারি হামিম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেল থেকে আবু বাকের মজুমদার, ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল থেকে এস এম ফরহাদ হোসেন এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থিত প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ থেকে মেঘমল্লার বসুও আলোচনায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ‘কমল মেডি এইড’ প্ল্যাটফর্ম চালু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন তিনি। এর মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, মেয়েদের কমন রুমে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, আন্তঃহল শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেলের আবু বাকের মজুমদার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জুলাই আন্দোলনের সময় ডিবি অফিসে আটক থাকা ছয় সমন্বয়কের একজন তিনি। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জিএস পদে শিবিরের প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ। এর আগে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। জসীমউদদীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতিও ছিলেন ফরহাদ।
আর প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি। তিনি ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী মুখ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ আমলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।