নেপালে ২৮টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১৪ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ এখন হিমালয়ের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে বানেশ্বর, সিংদরবার, নারায়ণহিতি এবং স্পর্শকাতর সরকারি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এই পরিস্থিতিতে এক তরুণ বিক্ষোভকারী অন্যদেরকে সরে যেতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কিছু গোষ্ঠী আমাদের বিক্ষোভে ঢুকে পড়েছে এবং উসকানি দিচ্ছে। আজ আমরা জিতেছি।’
বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। নিউ বানেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
কেন বিক্ষোভ?
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) নেপাল সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। এসব প্ল্যাটফর্মকে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছিল। গত ২৮ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহের সময়সীমা দেওয়া হলেও মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ), অ্যালফাবেট (ইউটিউব), এক্স (সাবেক টুইটার), রেডিট এবং লিঙ্কডইন সময়সীমার মধ্যে আবেদন জমা দেয়নি।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের পর এসেছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোকে একজন স্থানীয় যোগাযোগ কর্মকর্তা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল। তবে এই নির্দেশনা মানা হয়নি।

তরুণদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
উল্লেখ্য, টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিমবাজ, এবং পোপো লাইভ ইতিমধ্যেই নেপাল সরকারের কাছে নিবন্ধিত আছে এবং এখনো ব্যবহার করা যাচ্ছে। টেলিগ্রাম এবং গ্লোবাল ডায়েরি থেকে আসা আবেদনগুলো যাচাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিক্ষোভকারীরা কী বলছেন?
দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নেপালে প্রায় ১৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী রয়েছেন। এদের অনেকেই ব্যবসার জন্য এসব প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল। প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাদের প্রতিবাদ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ কেবল সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদ না থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
২৪ বছর বয়সী ছাত্র ইউজান রাজভান্ডারি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের কারণেই আমাদের এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করছি।’
২০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী ইক্ষমা তুমরোক জানান, তিনি সরকারের ‘স্বৈরাচারী মনোভাবের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্য প্রজন্মরা এটা সহ্য করে এসেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মকে এর অবসান ঘটাতে হবে।’
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এক বিক্ষোভকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘যখন নেতাদের ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে, তখন আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায়?’
সরকার কী বলছে?
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে সরকার জানিয়েছে, তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং এর সুরক্ষা ও অবাধ ব্যবহারের জন্য একটি পরিবেশ তৈরিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে সরকার টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্মটিও বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন তাদের যুক্তি ছিল, এই প্ল্যাটফর্মটি অনলাইন জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। গত বছর নেপাল সরকার টিকটক নিষিদ্ধ করলেও, প্ল্যাটফর্মটি নেপালের নীতিমালা মেনে চলতে রাজি হওয়ার পর আগস্ট মাসে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।