Tuesday 09 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু নির্বাচন
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও

কানজুল কারাম কৌষিক, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:১৮ | আপডেট: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৪৫

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনপ্রিয়তায় কিছু জায়গায় এগিয়ে রয়েছেন। ডাকসুর ২৮ পদে স্বতন্ত্র থেকে অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষ পর্যন্ত অর্ধেক পদেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেতে পারেন বলে ধারণা ঢাবি শিক্ষার্থীদের।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) রিসার্চ সোসাইটি। জরিপের ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। মিশ্র গবেষণা পদ্ধতি ও বিভিন্ন প্রশ্নের আলোকে গত ২৯ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯০০ ভোটারের অংশগ্রহণে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৩১০ জন শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে ইচ্ছুক, শিবির সমর্থিত প্যানেলে ১৬৭ জন ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে ১৩১ জন ভোট দিতে ইচ্ছুক। জরিপে অংশ নেওয়া ৯০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০৪ জন নারী ও ৩৯৬ জন পুরুষ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৪৯৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী ও ৪০৫ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

জরিপের গবেষক মো. ফাহিম হাসান মেহেদী বিশ্লেষণে বলেন, “প্রথমত, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি ছাত্ররাজনীতিতে একটি নতুন ধারা তৈরি করছে, যা প্রচলিত দলীয় রাজনীতির বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভোট না-দেওয়ার প্রবণতা মূলত আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটে নিহিত। যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, তবে এই আস্থাহীনতা কাটানো সম্ভব। তৃতীয়ত, সিদ্ধান্তহীন শিক্ষার্থীদের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ‘কিং-মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের ভোট কোন দিকে যাবে, তা শেষ মুহূর্তে ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে।”

শীর্ষ তিন পদে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন একঝাঁক স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী। তাদের মধ্যে অন্যতম শামীম হোসেন। ভিন্নধর্মী বক্তব্য ও ইশতেহার দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। শামীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী; থাকেন বিজয় একাত্তর হলে। বর্তমানে কোনো দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না থাকলেও তিনি এক সময় জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জুলাই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উমামা ফাতেমা স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তিনি একসময় গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব ছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করেন। প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী থাকেন কবি সুফিয়া কামাল হলে। তিনি জুলাই আন্দোলনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্রের দায়িত্বেও ছিলেন। উমামা ও শামীম দু’জনই আগে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে আলোচনায় আছেন।

ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আলোচনায় রয়েছেন কয়েকজন তরুণ স্বতন্ত্র প্রার্থীও । এ পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু রাজনৈতিক প্রার্থীদের দিকে থাকলেও পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ২০১৯ সালের নির্বাচনে সূর্য সেন হল সংসদে সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাংবাদিকতার সূত্রে ক্যাম্পাসে পরিচিতির পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তিনি। জুলাইয়ে সরকার পতন আন্দোলনের আগে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে যে দুই ছাত্র আপিল করেছিলেন, তাদের একজন ছিলেন তিনি।

মুখে সিগারেট ও অভিনব ইশতেহার দিয়ে আলোচনায় এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান। মাস্টারদা সূর্য সেন হলের এ আবাসিক শিক্ষার্থী এবার ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। জিএস পদে আলোচনায় আছেন নিরাপত্তা মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আরাফাত চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আলোচনায় রয়েছেন একঝাঁক তরুণ মুখ। স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন আশিকুর রহমান জীম, তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, হাসিব আল ইসলামসহ অনেকেই। স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করলেও তারা সকলেই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সঙ্গে জড়িত। দল থেকে প্যানেলে না আসায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা।

সম্পাদক পদগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জনপ্রিয়

এছাড়াও বিভিন্ন সম্পাদক পদেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নূমান আহমেদ চৌধুরী, এম এ সায়েদসহ বিভিন্ন নির্দলীয় প্রার্থী। তারা দু’জনই জুলাই আন্দোলনে সহ-সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী লানজু খান, পারভেজ মাহমুদ নিলয়, অনিদ হাসানসহ বেশ কিছু প্রার্থী। লানজু খান জুলাই আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জয়ধ্বনি’র সঙ্গে যুক্ত থাকায় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত মুখ। ডাকসু নিয়ে তার গাওয়া গানও শিক্ষার্থীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। পারভেজ মাহমুদ নিলয়ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাতিক্রম প্রচারণা করে আলোচনায় এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তিনিও শিক্ষার্থীদের পরিচিত মুখ। তিনি বিজয় ৭১ হলের শিক্ষার্থী।

অনিদ হাসান ব্যতিক্রমধর্মী বক্তব্য ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সাড়া জাগানো প্রোগ্রাম আয়োজন করে সুপরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়ছেন। তিনি অমর একুশে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়াও, এই পদে আলোচনায় রয়েছেন মোসাদ্দেক ইবনে আলী। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে তাকে দেখা গিয়েছে। তিনি ২১-২২ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত মুখ সানজিদা তন্বী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার অবদানকে সম্মান জানিয়ে ছয়টি প্যানেল এ পদে কোনো প্রার্থী রাখেনি।

ক্রীড়া সম্পাদক পদে রাজনৈতিক প্রার্থীদের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন একঝাঁক স্বতন্ত্র প্রার্থী। ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী মুহাইমেনুল ইসলাম তকি পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকের ভিডিও বার্তায় শুভকামনা পেয়ে আলোচনায় আছেন। এর আগে, আরেক প্রার্থী জহিন হোসেন জামিকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার তাওহীদ হৃদয় ও তানজিম হাসান সাকিব। ফলে জামিও রয়েছেন আলোচনায়। এছাড়াও ক্রীড়া সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন মুক্তার হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী।

পরিবহণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাফিজ খান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুর রোডের বাস চৈতালির সাবেক সভাপতি। এ পদে ছাত্রদল ও শিবিরের প্রার্থীও আলোচনায় রয়েছেন। সমাজসেবা সম্পাদক পদে রাজনৈতিক প্রার্থীদের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থী এবি জুবায়ের। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে তাকে দেখা যায়।

ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চ্যজ্ঞা। তিনি বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। তাই শিক্ষার্থীদের একটি অংশে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তবে কোন পদে কে পাস করবেন তা জানতে হলে চোখ রাখতে হবে আগামীকালের ফলাফল বোর্ডে।

সারাবাংলা/কেকে/পিটিএম

ডাকসু নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রার্থী স্বতন্ত্র

বিজ্ঞাপন

নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০২

১৬ বছরেই পাওয়া যাবে এনআইডি
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর