Tuesday 09 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তিপ্রিয় সমাজ গঠনে সংলাপের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:৩৩

খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন আয়োজিত সেমিনার।

ঢাকা: সহিংসতা ও দ্বন্দ্বমুক্ত, বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তুলতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংলাপকে এগিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, বৈষম্য ও ঘৃণার আবহে কোনো সমাজ অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে না, আর ব্যক্তিগত পর্যায়েও মানুষের সৃজনশীলতা বিকশিত হয় না।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশতে (কেআইবি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি ও ‘ডিকাস্টেরি ফর ইন্টাররিলিজিয়াস ডায়ালগ’-এর প্রিফেক্ট কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকোব কোভাকাদ। উপস্থিত ছিলেন বিদেশি কূটনীতিক, শিক্ষক, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে।

বিজ্ঞাপন

কার্ডিনাল কোভাকাদ বলেন, ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপের লক্ষ্য কারো ধর্ম পরিবর্তন নয়, বরং একে অপরকে শোনা, বোঝা, সম্মান দেওয়া এবং বিশ্বাস গড়ে তোলা। এটি পারস্পরিক সমৃদ্ধির পথ।’

তিনি ২০১৯ সালে আবুধাবিতে পোপ ফ্রান্সিস ও আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল-তাইয়েব সই করা ‘হিউম্যান ফ্রাটারনিটি ডকুমেন্ট’ স্মরণ করান। এই নথি মানব ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নিরীহ মানুষের রক্তপাত বন্ধ এবং পৃথিবীকে সবার সমান বাসভূমি হিসেবে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘বৈচিত্র্য বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক, তাই ঐক্যবদ্ধ বৈচিত্র্যই প্রয়োজন।’

তিনি কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করে বলেন, ‘মুসলমানদের উচিত ধর্মীয় ভিন্নতাকে ইতিবাচকভাবে দেখা এবং ভালোবাসা ও সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রহণ করা।’

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মিল্টন কুমার দেব বলেন, ‘সব ধর্মই শান্তি, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়, অথচ বিশ্বজুড়ে দ্বন্দ্ব ও বিদ্বেষ প্রবল। ঘৃণা সহিংসতায় রূপ নিলে সন্ত্রাসের জন্ম হয়। মানব ভ্রাতৃত্বই ঘৃণা নামক মহামারির প্রতিষেধক।’

ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন র‍্যান্ডাল বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময়ই সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। ভবিষ্যতে কেউ যেন শান্তি নষ্ট করতে না পারে।’

ঢাকা আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ বিজয় ডি’ক্রুজ বলেন, ‘আচার-অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার চেয়ে বেশি জরুরি হলো আধ্যাত্মিকতা গড়ে তোলা। প্রকৃত আধ্যাত্মিক মানুষ কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।’

ভিন্নতা স্বাভাবিক এবং সেই ভিন্নতাকে গ্রহণের মধ্য দিয়েই সমাজ সমৃদ্ধ হয় বলে একমত সেমিনারের সকল বক্তারা। তাই পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংলাপ ও সহযোগিতা শান্তিপূর্ণ ও বহুত্ববাদী সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি।

উল্লেখ, খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন ভ্যাটিকান ও অন্যান্য দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ ও সম্প্রীতি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘এসো গড়ি সম্প্রীতির সংস্কৃতি’ (Promoting a Culture of Harmony)। ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি দল ৬–১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সভা করবে, যা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধকে আরও দৃঢ় করবে।

সারাবাংলা/এফএন/এইচআই

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ধর্মনিরপেক্ষ ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর