ঢাকা: কর নথিতে প্রায় দেড় হাজার বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য দেখানো হয়নি। আর এ সব গাড়ির তথ্য গোপন করে প্রায় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) কার্যক্রমে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কর আদায়ে ওইসব গাড়ির মালিক বা প্রতিষ্ঠানের নথি পর্যালোচনা করে আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বিলাসবহুল গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছে, যা দেশের ৪১টি কর অঞ্চলের আওতাভুক্ত। নিবন্ধিত ওইসব গাড়ির মধ্যে কর নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২ হাজার ৭১৯টি গাড়ি। কর নথিতে দেখানো হয়নি এমন বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ৩৩৯ টি। আর বিলাসবহুল গাড়ির ৪০৯ জন ক্রেতা রিটার্ন-ই দাখিল করেননি। এই সময়ে মালিকানা স্থানান্তর হয়েছে ৪৪২টি গাড়ির। ১৮৮টি গাড়ি সম্পর্কে নথি পুনঃউন্মোচন করতে বলা হয়েছে।
২০২৫-২৬ করবর্ষে আয়কর নথিতে ১৪৮টি গাড়ির তথ্য উল্লেখ করার কথা রয়েছে, যা কর অঞ্চলগুলোকে তদারকি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, ৪৩টি গাড়ি রয়েছে, যেলোর আয়ের উৎস্য ব্যাখ্যা করা হয়নি। ওই গাড়িগুলোর ফাইলও পুনঃউন্মোচনের কথা বলা হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০২১ সাল থেকে থেকে চলতি বছরের ফেব্রয়ারি পর্যন্ত বিলাসবহুল গাড়ি এসেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এই গাড়িগুলো বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে নিবন্ধনও নিয়েছে। এর মধ্যে ল্যাম্বরগিনি একটি, ফেরারি চারটি, টেসলা পাঁচটি, মাসরাতি ১২টি, ক্যাডিলাক ১৭টি, রোলস রয়েলস ২৫টি, বেন্টলি ২৯টি, জাগুয়ার ৭১টি, পোরশে ৮১টি, রেঞ্জ রোভার ২১৯টি, অডি ৪৮৬টি, ল্যান্ড রোভার ৫০৮টি, জিপ ৬৯৫টি, মার্সেডিজ ৭৭৪টি, বিএমডব্লিউ একহাজার ২২৭টি ও ৩ হাজার সিসির বেশি ক্ষমতাধর টয়োটা গাড়ি একহাজার ৩৩৫টি। আর এসবের মধ্যে কর নথিতে উল্লেখ করা হয়নি প্রায় দেড় হাজার গাড়ির তথ্য। এসব গাড়ি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধিত।
তথ্যমতে, বিলাসবহুল গাড়িতে ধনিক শ্রেণি বিনিয়োগ করে থাকে। কালো টাকায়ও কেনা হয় দামি গাড়ি। তবে সেই সম্পদ অপ্রদর্শিত রাখতে কর নথিতে তা উল্লেখ করা হয় না। কর ফাঁকি দিতেও এসব পন্থা অবলম্বন করা হয়। এনবিআর বলছে, বিলাসবহুল গাড়িতে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি ধনিক শ্রেণি বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিপরীতে কর ফাঁকি দিয়েছেন। বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে রাজস্ব প্রায় সাড়ে ৮০০ শতাংশ করা রয়েছে। এসব গাড়ির প্রতিটির সর্বনিম্ন দাম দেড় থেকে দুই কোটি কোটি। কোনো কোনো গাড়ির দাম তিন কোটি টাকার উপরেও। কর নথিতে এসব গাড়ির তথ্য উল্লেখ করলে গাড়ি প্রতি বিপুল অংকের কর আসে। আর ওই কর ফাঁকি দিতেই নথিতে বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য উল্লেখ করেননি অনেকই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরে এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কর নথিতে গাড়ির তথ্য উল্লেখ না করায় দুই কোটি টাকার গাড়িতেও জরিমানাসহ কর আসবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে দেড় হাজার গাড়িতে হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে।’
জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেখানে কর ফাঁকির এলিমেন্ট পাব, সেখানে থেকেই ন্যায্য কর আদায়ের জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা তা নেব। এটিই এখন আমাদের অগ্রাধিকার। কর ফাঁকি উদঘাটন ও যারা ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করে না এবং মোটেও ট্যাক্স দেয় না, এমন মানুষদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা- এটি নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। এখানে যেটি হয়েছে, সেটি কর ফাঁকি হিসাবে গণ্য হবে এবং তাদের ওপর কর আরোপ করা হবে।’
তথ্য মতে, আয়কর আইন অনুযায়ী সব সম্পদের তথ্য কর নথিতে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। এ সব তথ্য উল্লেখ না করলে আয়কর আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া, এই অপরাধে ফৌজদারি মামলাও করা যেতে পারে। আর ওইসব গাড়ি কেনায় যে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, আয়কর আইন অনুযায়ী সেই ক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।