নোয়াখালী: নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ওছখালি এলাকার ‘হীড বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও অফিস থেকে শংকর সাহা (৪১) নামে এক ঋণগ্রহীতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার পর মারা যান তিনি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এনজিও’র অফিসের লোকজন শংকরকে ঋণ না দিয়ে উলটো তাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। তবে, বিষয়টি অস্বীকার করে এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে তিনি অফিসে যাওয়ার আগেই বিষ পান করে এসেছিলেন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে হাতিয়া থানা পুলিশ।
নিহত শংকর সাহা হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খুশি সশী চন্দ্র সাহার ছেলে। তার দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শংকর সাহা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। পরিবারে অভাব থাকায় গত ৮/৯ মাস আগে ‘হীড বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও’র ওছখালি শাখা থেকে শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে দুই লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন তিনি। ঋণ গ্রহণের সময় এনজিও থেকে জানানো হয়, গ্রহিত ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করলে পুনঃরায় আবারও তাকে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে।
নিহতের স্ত্রী রিংকু সাহা অভিযোগ করে বলেন, ‘এনজিও থেকে নেওয়া দুই লাখ টাকা পরিশোধের পর সোমবার বিকেল ৪টার দিকে পুনঃরায় ঋণের জন্য যায় শংকর। এর আগেও দুইদিন গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিলেন তিনি। সবশেষ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শংকর আমাকে মোবাইলে জানায় হীড অফিসাররা ঋণ দেবেন না। বিষয়টি নিয়ে তারা তাকে অপমানমূলক কথা বলছে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অফিসের একটি মোবাইল থেকে আমার ছেলে হৃদয় সাহাকে জানানো হয় শংকর বিষ পান করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘এনজিও অফিসাররা ঋণ না দিয়ে উলটো শংকরকে অপমান ও মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে। সবশেষ তারা অফিসে যাওয়ার পর শংকরকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন।
হীড বাংলাদেশ ওছখালি শাখার এরিয়া ম্যানেজার অলক কুমার হালদার জানান, শংকর এগার কিস্তিতে দুই লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার পর দশ মাসের কিস্তি পরিশোধ করেছিল। আগামি অক্টোবর মাসে ২০ হাজার টাকা কিস্তি বাকি ছিল। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে সে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারতো না। এরইমধ্যে কয়েকদিন আগে তার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় পরিচয়ে আমাদের ফিল্ড কর্মকর্তাকে জানানো হয় শংকরকে যেন নতুন করে ঋণ না দেওয়া হয়। কারণ সে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। তবে ওই ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন রাখেন।
অভিযোগের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘শংকর অফিসে আসার আগে বিষ পান করে এসেছে। অফিসে আসার আধ ঘণ্টা পর সে আমার ব্যবহৃত বাথরুমে গিয়ে বমি করতে শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমাদের অফিস থেকে তাকে বিষ প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।’
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর তার পেট থেকে বিষ বের করা হয়েছিল। পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। নেওয়ার প্রস্তুতিকালে রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান। ইঁদুরের ওষুধ বা কীটনাশক সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে বুঝা গেছে।’
হাতিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজমল হুদা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। মঙ্গলবার দুপুরে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ ও নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।